কেমন ছিল হাথুরুর দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম সংবাদ সম্মেলন?

সৌরভ কুমার দাস প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩, ১১:৫৭ পিএম

পড়নে বাংলাদেশের অনুশীলন জার্সি আর জিন্সের প্যান্ট। মাথায় ক্যাপ আর চোখে সাদা চশমা পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হলেন এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র চান্ডিকা হাথুরুসিংহে।

সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকে একটুখানি যেন স্মৃতি বিজড়িত হয়ে পড়লেন হাথুরু! হয়তো মনে করতে চাইলেন, আরে এটা তো আমার খুব পরিচিত জায়গা। দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম সংবাদ সম্মেলন, শুরুটা যেন ফ্রেমবন্দী করে রাখতে চাইলেন। তাইতো নিজের ফোন দিয়ে রাবিদ ইমামকে বললেন একটা ছবি তুলে রাখতে।  

সূচী অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল দুপুড় আড়াইটাতে। নির্ধারিত সময়ের অন্তত দেড় ঘণ্টা আগে গিয়েও বসার জন্য চেয়ার খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে কয়েকজন সাংবাদিকদের। পরে যারা এসেছেন তাদের কথা আর নাই-বা বললাম। চান্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার আগে তাকে ঘিরে গণমাধ্যমের আগ্রহের অনেকটাই দেখা গিয়েছিল সোমবার রাতে।

বিমানবন্দরে তার অপেক্ষায় ছিলেন অন্তত অর্ধশতাধিক সাংবাদিক। আর আজ? আজ তো হোম অফ ক্রিকেটের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে যেন সাংবাদিকদের ঢল নেমেছিল।

প্রথম দফায় যেভাবে চলে গিয়েছিলেন তাতে এবার কেন ফিরে আসলেন এটা নিয়ে ক্রিকেট পাড়ায় কৌতূহল নেই এমন লোক পাওয়া যাবে না। সংবাদ সম্মেলনেও প্রথম এই প্রশ্নই করা হলো তাকে।

উত্তরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রটি নিজের সফট কর্ণারের কথা উল্লেখ করেন হাথুরুসিংহে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য আমার সবসময়ই সফট কর্নার ছিল। এটা প্রথম আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ছিল আমার। মাথায় ছিল, কখনো না কখনো ফিরে আসার। আমি ভেবেছি এটাই সঠিক সময়। দুটি বিশ্বকাপ সামনে আছে।”

গত দুই বছরে হাথুরুর ফেরার গুঞ্জন ছড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। সেগুলো যে খুব একটা মিথ্যা নয় সেটার প্রমাণও পাওয়া গেল আজ। টানা দুইবার বললেন তাকে দেওয়া বিসিবির এবারের দেওয়া প্রস্তাব প্রথমবারও নয় দ্বিতীয়বারও নয়।

বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট ক্রান্তিকালীন সময় পার করছে বলে মনে করেন হাথুরু। সিনিয়র আর জুনিয়দের নিয়ে সামনের দুই-তিন বছর এগিয়ে যেতে চান তিনি।

“আমার দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তর দিচ্ছি। আমার মনে হয় এটা ক্রান্তিকালীন সময়। সামনের দুই-তিন বছর এগিয়ে যেতে চাই। সিনিয়ররা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছে। তারা সম্ভবত বাংলাদেশের কিংবদন্তি খেলোয়াড়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা প্রজন্ম হিসেবে মনে থাকবে। পাশাপাশি কিছু দারুণ তরুণ ক্রিকেটার উঠে আসছে। এই ধরনের প্রতিভার সঙ্গে কাজ কো আমাকে সবসময়ই মোটিভেট করে” যোগ করেন হাথুরু।

হাথুরুর অধীনে প্রথম দফায় একাধিক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার কি হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আপাতত কিছু বলতে চাইলেন না। কিছু জায়গা উন্নতি করার পাশপাশি ঠিকঠাক কম্বিনেশনের কথাও বললেন তিনি।

হাথুরু বলেন, “ভবিষ্যতে কী হবে সেটা জানি না। এটা বলতে পারি, এই পর্যায়ে আমরা সেরা চার দলের একটি না। এই অবস্থায় আমার পক্ষে এটা করবো, এমন বলা সম্ভব না। আমাদের কিছু জায়গায় উন্নতি করতে হবে, ফিট হতে হবে। স্কিলে উন্নতি করতে হবে, কম্বিনেশন ঠিকঠাক লাগবে। নিশ্চিত করতে হবে খেলোয়াড়রা যেন বিশ্বকাপের সময় সেরা ছন্দে থাকে, যথেষ্ট ফিট থাকে। দেখা যাক কী হয়।”

হাথুরু দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরই সিনিয়র খেলোয়াড়দের সামলানো নিয়ে আলোচনা লেগেই ছিল। তবে হাথুরু অবশ্য বলছেন, শেষবারও কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না, এবারও কোনো চ্যালেঞ্জ নেই।

হাথুরু যোগ করেন, “নাহ, একদমই না। আমি ইতোমধ্যেই সব সিনিয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয় সবার ফোকাস একটা ব্যাপারেই, দল এক নম্বরে। সবাই চায় দল ভালো করুক। এমনকি শেষবারও কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। আমার চ্যালেঞ্জ ছিল দলের সবার নজর দল ভালো করায় রাখা। তো আমার মনে হয় না এটা চ্যালেঞ্জ হবে।

মোটামুটি বেশ নিরামিষভাবেই শেষের পথে এগোচ্ছিল সংবাদ সম্মেলন। শেষদিকে হোম অ্যাডভান্টেজের প্রশ্ন উঠতেই যেন নিজের চীরচেনা ক্যারেক্টারে ফিরে গেলেন হাথুরু।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে আলোচিত ব্যক্তির নাম চান্ডিকা হাথুরুসিংহে। প্রথম মেয়াদে তার অধীনে বাংলাদেশ যেমন উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্য পেয়েছে তেমনি বেশ কিছু কারণে সমালোচিতও হয়েছেন। তার মধ্যে একটা হলো, ঘরের মাঠে স্পিন উইকেট বানিয়ে শর্টকাটে সাফল্য পাওয়ার কৌশল।

দ্বিতীয় মেয়াদে যখন আবার টাইগারদের হেড কোচের দায়িত্ব নিতে ঢাকায় আসলেন হাথুরু তখন সময়ের ব্যবধান প্রায় ছয় বছর। এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রতিশ্রুতিশীল পেস বোলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

উত্তরে কিছুটা অসন্তষ্ট হওয়া হাথুরু পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘হোম অ্যাডভান্টেজ কি? আমি আপনাকে আবারও জিজ্ঞাসা করি,  ‘হোম অ্যাডভান্টেজ বলতে কি বোঝায়? যখন আপনি নিউজিল্যান্ডে যাবেন, অস্ট্রেলিয়াতে যাবেন তার কি উইকেট বানায়? ভার‍ত তাদের ঘরের মাটিতে কি করে?”

এ সময়ে দেশের বাইরের পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন ছোড়া হয় হাথুরুর কাছে। সেখানেও তিনি নিজের বক্তব্যেই অবিচল ছিলেন। তার মতে, নিজেদের যা আছে সেটা দিয়েই দেশের বাইরে ম্যানেজ করতে হবে। এরপর আবারও পাল্টা প্রশ্ন করেন, মিসাইল না থাকে তাহলে তুমি কীভাবে লড়াই করবে!

“দেশের বাইরে গেলে আমাদের যা আছে, তা দিয়েই ম্যানেজ করতে হবে। যদি মিসাইল না থাকে তাহলে তুমি কীভাবে লড়াই করবে। আমাদের তো গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে, তাই না? ওদের আমাদের ঘরে আসতে দাও, আমরা ছোট্ট ছোট্ট অস্ত্র দিয়ে লড়ব। যদি আমাদের অস্ত্র না থাকে তাহলে তো আমরা কিছু করতে পারব না” যোগ করেন হাথুরু।