কাতার বিশ্বকাপ

টাইব্রেকার জিতে ৩৬ বছর পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

পার্থ প্রতীম রায় প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ০৯:০০ পিএম

টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ে খেলা ৩-৩ সমতায় শেষ হওয়ায় শুরু হয় টাইব্রেকারের লড়াই। সেখানে পুরো ম্যাচে ফাইট দেওয়া ফ্রান্স আর নিজেদের স্নায়ু ধরে রাখতে পারেনি। ফলে সেখানে ৪-১ ব্যবধানে হেরে রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো।

টাইব্রেকারে নির্ধারিত হবে ফাইনাল ভাগ্য

এমবাপের হ্যাটট্রিক ও লিওনেল মেসির জোড়া গোলে ৩-৩ সমতায় শেষ হয়েছে কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময়। এই সময়ে কোনো ফল না আসায় খেলা গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শ্যুট আউটে নির্ধারিত হবে ম্যাচের ফলাফল। কার হাতে উঠবে শিরোপা সেটা জানা যাবে পেনাল্টি শ্যুট আউটের পর।

এর আগে ২০০৬ সালে পেনাল্টি শ্যুট আউটে নির্ধারিত হয়েছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সেবার ইতালির কাছে হেরে ফাইনালে হেরেছিল ফ্রান্স।

এমবাপের হ্যাটট্রিকে, সমতায় ফ্রান্স

১০৭তম মিনিটে লিওনেল মেসির গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তবে ১১৮ মিনিটে ডি বক্সে আবারও ঝামেলা পাকায় আর্জেন্টিনা। এবার ডিবক্সে  গ্যাব্রিয়েল মন্তিয়েলের হাতে বল লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে সুযোগ পেয়ে বল জালে জড়ান এমবাপে। ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক দেখলো বিশ্ব। বিশ্বকাপের ফাইনালে জিওফ হার্স্ট প্রথম ফুটবলার হিসেবে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন এমবাপে। ফাইনালে এমবাপের চেয়ে বেশি গোল করেননি আর কোনো ফুটবলার। বিশ্বকাপের ফাইনালে তার গোল সংখ্যা ৪ টি। 

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে মেসির গোলে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা

অতিরিক্ত সময়ে  ১০৭তম মিনিটে গোলের দেখা পান লিওনেল মেসি। তার গোলে আবারও এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে শতগোল পূর্ণ করেছেন লিওনেল মেসি।

অতিরিক্ত সময়ে প্রথমার্ধেও সমতা

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়েও কোনো গোল করতে পারেনি দুই দল। এখন অপেক্ষা দ্বিতীয়ার্ধে কী হয় তা দেখার।

অতিরিক্ত সময়ে গড়াল ফাইনাল

কিলিয়ান এমবাপের গোলে সমতায় ফিরেছিল ফ্রান্স। প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা গোল হজম করে দ্বিতীয়ার্ধে। কিলিয়ান এমবাপের জোড়া গোলে সমতায় ফেরে ফরাসিরা। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে।

সমতায় ফিরলো ফ্রান্স

পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমালেন কিলিয়ান এমবাপে। পরের মুহূর্তেই ম্যাচে দ্বিতীয় গোল এমবাপের। সমতায় ফিরলো ফ্রান্স। প্রথমবারের মতো কাতার বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গোলের দেখা পেলেন এমবাপে। জোড়া গোলে মেসিকে ছাড়িয়ে এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন এমবাপে। মেসির ছয় গোলের বিপরীতে এমবাপের গোল সাতটি।

বদলি নামালেন স্ক্যালোনি

ম্যাচের ৬৪তম মিনিটে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে তুলে নিয়েছেন কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি। তার বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছেন মার্কাস অ্যাকুইনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কোনো দলই পরিবর্তন আনেনি।

দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের পসরা সাজিয়েছে আর্জেন্টিনা

প্রথমার্ধে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে ফিরেও ধরে রেখেছে নিজেদের ওই আধিপত্য। স্টেডিয়ামজুড়ে সমর্থকদের আধিপত্যের পাশাপাশি মাঠেও আধিপত্য। সব মিলিয়ে মাঠের আক্রমণের ধার কমেনি আলবিসেলেস্তাদের। সাজিয়ে বসেছে একের পর এক আক্রমণের পসরা।

ম্যাচের প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার জালে কোনো শট নিতে পারেনি ফ্রান্স। বিপরীতে প্রথমার্ধে ফরাসিদের জাল লক্ষ্য করে তিনটি শট নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। তিন শটের দুইটি থেকেই গোল করে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। একমাত্র জুলিয়ান আলভারেজের নেওয়ার শট থেকেই গোল করতে পারেনি আলবিসেলেস্তারা। এছাড়াও প্রথমার্ধে বেশিরভাগ সময়ই বল ছিল আর্জেন্টিনার পায়ে। ৫৯ শতাংশ সময়ই বল দখলে রেখেছিল লিওনেল মেসি ও সতীর্থরা।

২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে আর্জেন্টিনা

বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে হলুদ কার্ড দেখেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার এনজো ফার্নান্দেজ। বদলি হিসেবে নামা কোলো মুয়ানিকে কড়া ট্যাকল করে কার্ড দেখেন। অবশ্য এর আগেই কাজের কাজ করেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার করা গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

বদলি নামালো ফ্রান্স

দ্বিতীয় গোল হজমের পাঁচ মিনিটের মাথায় প্রথম পরিবর্তন আনলো ফ্রান্স। ম্যাচের ৪১তম মিনিটে ওসমান ডেম্বেলে ও অলিভার জিরুডকে তুলে নেন ফ্রান্স কোচ। তাদের বদলি হিসেবে কোলো মুয়ানি ও মার্কাস থুরামকে মাঠে নামান ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম।

স্কোরশিটে নাম তুললেন ডি মারিয়া

ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচে দ্বিতীয় গোল করেছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। প্রতি আক্রমণে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মধ্যমাঠ থেকে লিওনেল মেসির কাছ থেকে বল পান জুলিয়ান আলভারেজ। ওই বল অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের কাছে পাঠান আলভারেজ। সেখান থেকে ডি মারিয়া বল পেয়ে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি। গোলরক্ষক হুগো লরিসকে বোকা বানিয়ে বল সহজেই জালে জড়ান এই তারকা।

পেনাল্টি থেকে আর্জেন্টিনার গোল

স্পট কিক থেকে গোল করতে ভুল করেননি লিওনেল মেসি। ম্যাচের ২২তম মিনিটে ডিবক্সের বামদিকে আর্জেন্টাইন উইঙ্গারকে ফেলে দেন ফরাসি ফরোয়ার্ড ওসমান ডেম্বেলে। ফলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি সাইমন মার্চিনিয়াক।

২৩তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি মেসি। ফ্রান্সের অভিজ্ঞ গোলরক্ষক হুগো লরিসকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়ান। এতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে আলবিসেলেস্তা সমর্থকরা। এই গোলে ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপেকে ছাড়িয়ে কাতার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন মেসি।

ডান প্রান্ত দিয়ে বারবার আক্রমণে উঠছে আর্জেন্টিনা
ফরাসিদের হয়ে রক্ষণের ডানপ্রান্ত সামলাচ্ছেন ডিফেন্ডার জুলস কুন্দে। তবে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের আটকে রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। ডান প্রান্ত দিয়ে কুন্দেকে পরাজিত করে বারবারই ভেতরে ঢুকে যাচ্ছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। এই দিক থেকেই প্রথম পেনাল্টি তুলে নিয়েছে আর্জেন্টিনা।

মাঠে নেমেছে ফাইনালিস্ট দুই দল

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। দুই দলের সামনেই তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের সুযোগ। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের সুযোগ ফ্রান্সের সামনে আর দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার পর শিরোপা জিতে সমর্থকদের উল্লাসে ভাসাতে মরিয়া আরলবিসেলেস্তারা।

সর্বশেষ ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলেছিল আর্জেন্টিনা। সেবার জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল আলবিসেলেস্তাদের। আট বছরের ব্যবধানে আরও একবার সুযোগ এসেছে আর্জেন্টিনার দলটির সামনে। এবার শিরোপা জিতেই ঘরে ফিরতে মরিয়া দলটি।

বিপরীতে ২০০৬- এ স্বপ্ন ভঙ্গের পর ২০১৮ সালে রাশিয়াতে শিরোপা ঘরে তুলেছিল ফ্রান্স। ২০২২ এ ইনজুরির বাধা থাকলেও ফাইনালে উঠেছে দলটি। তৃতীয় দল হিসেবে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিততে চায় তারা।

বিশ্বকাপের মঞ্চে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি হলো দুই দল। প্রথম দুইবার আর্জেন্টিনা জিতলেও শেষবার হেসেছিল ফ্রান্স। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় ফরাসিদের কাছে হেরেই দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল ফ্রান্স।

ইউরোপ ও ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে এটা ১১তম বিশ্বকাপ ফাইনাল। এর আগের ১০ বারের ৭ বার শিরোপা জিতেছিল ইউরোপিয়ান দলগুলো। আর তিনবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলো।

আর্জেন্টিনা একাদশ

এমিলিয়ান মার্টিনেজ, মার্কাস অ্যাকুইনা, নিকোলাস ওটামেন্ডি, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, নাহুয়েল মলিনা, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, রদ্রিগো ডি পল, এনজো ফার্নান্দেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, লিওনেল মেসি ও জুলিয়ান আলভারেজ।

ফ্রান্স একাদশ

হুগো লরিস, জুলস কুন্দে, দায়োত উপামেকানো, রাফায়েল ভারানে, থিও হার্নান্দেজ, অরলিয়েন চুয়ামেনি, অ্যান্তেনিও গ্রিজম্যান, ওসমান ডেম্বেলে, অলিভার জিরুড, কিলিয়ান এমবাপ্পে।