সাক্ষাৎকারে মুনিম শাহরিয়ার

‘সুযোগ কাজে লাগিয়ে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারিনি’

পার্থ প্রতীম রায় ও সৌরভ কুমার দাস প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২২, ০৭:০০ পিএম

ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অন্যতম সম্পদ হিসেবে মুনিম শাহরিয়ারকে বিবেচনা করা হয়। ২০২১ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) দারুণ পারফর্মেন্স করে প্রথম নজরে আসা এই ক্রিকেটার জাতীয় দলে ডাক পান ২০২২ সালের মার্চে। এর আগে পারফর্ম করেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ৮ম আসরেও।

জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর তার উপর থাকা আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। অবশ্য তিনি কতটুকু সুযোগ পেয়েছেন তা নিয়েও ক্রিকেট মহলে রয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন। মুনিম নিজে অবশ্য কতটুকু সুযোগ পেয়েছেন তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন রাখতে চান না। বরং, যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন তাতে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারাটাকেই বড় করে দেখছেন।

প্রমাণ করতে না পারা ও ইনজুরির কারণে জাতীয় দলের বাইরে গিয়েছিলেন মুনিম শাহরিয়ার। ইনজুরি কাটিয়ে অনুশীলন শুরু করা এই ক্রিকেটার এখন প্রস্তুত হচ্ছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগকে (এনসিএল) সামনে রেখে। মাঠে ফেরার আগে বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) মিরপুরে সংবাদ প্রকাশের দুই ক্রীড়া প্রতিবেদক পার্থ প্রতীম রায় ও সৌরভ কুমার দাসের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুনিম। সেখানেই কথা হয়েছে তার ইনজুরি, পারফর্মেন্স আর জাতীয় দল নিয়ে।

সংবাদ প্রকাশ: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। পরে হুট করেই জাতীয় দল থেকে বাদ। আপনি সুযোগ কম পেয়েছেন বলে মনে হয় কি?

মুনিম শাহরিয়ার: দেখেন, সুযোগ কম বা বেশি, সেটা তো আর আমার হাতে নেই। আর ব্যক্তিগতভাবে এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। শুধু এটা বলতে পারি, আমাকে যে সুযোগগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কাজে লাগিয়ে আমার নামের ওপর সুবিচার করতে পারিনি। এছাড়া মাঝে আমার ইনজুরিও ছিল, এ কারণে অনুশীলনে বাধা পড়েছিল; তাতে আমি পুরোপুরি ফোকাসটা দিতে পারিনি। তারপরও ম্যাচে আমার আরও ভালো করা উচিত ছিল, এটাতে কোনো সন্দেহ নেই। সব মিলিয়ে ভালো করতে পারিনি।

সংবাদ প্রকাশ: আবার জাতীয় দলে সুযোগ পেতে কী করছেন?

মুনিম শাহরিয়ার: ইনশা আল্লাহ সামনে জাতীয় লিগ খেলতে যাচ্ছি। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আছে। যদি সব মিলিয়ে ভালো পারফর্ম করতে পারি, সেটা যদি জাতীয় দলে ঢোকার মতো থাকে, তাহলে আশা করি আমি আরও সুযোগ পাব।

সংবাদ প্রকাশ: জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরপরই বাদ পড়েছেন। এই সময়ে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্যটা কী বুঝলেন?

মুনিম শাহরিয়ার: পার্থক্য তো আছেই। কারণ, ঘরোয়া ক্রিকেটে ন্যাশনাল খেলোয়াড় নেই, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবাই ইন্টারন্যাশনাল মানের। ন্যাশনাল ক্রিকেটাররা সাধারণত সবাই টপে থাকে, যারা ঘরোয়া লিগে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বাজে বল বেশি পাওয়া যায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কম থাকে, এটাই পার্থক্য।

সংবাদ প্রকাশ: দল থেকে বাদ পড়ার পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা ও দলে ফিরতে কী করতে হবে, এমন কোনো কথা হয়েছে কি?

মুনিম শাহরিয়ার: সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হয়। আপাতত এই নিয়ে (অনুশীলন বা পরামর্শমূলক) কথা হয়নি।

সংবাদ প্রকাশ: দল থেকে বাদ পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি দেখার পর নিজের উপলব্ধি কী?

মুনিম শাহরিয়ার: অভিষেকের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখিনি। তবে যখন ইনজুরিতে পড়েছি, তখন দেখেছি। আমি ওদের (সমর্থকদের) প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারিনি। এজন্য হয়তো গালিগালাজ করছে। এমনকি আমার পরিবার নিয়েও গালি শুনতে হয়েছে। এগুলো আসলেই খারাপ লাগে। আমি জানি আমার ভেতরে কী চলছে বা আমার কিসের সঙ্গে ফাইট চলছে। খেলা আছে, পরিবারও আছে। মানুষ যখন সমালোচনা করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে ফেলে, স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগে। প্রথমে বেশিই খারাপ লাগত। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এখন এগুলো মেনে নিতে পারি।

সংবাদ প্রকাশ: ইনজুরি থেকে ফিরে নিজের উন্নতিতে কী কী করছেন?

মুনিম শাহরিয়ার: আমি তো তিন-চার মাস ব্যাটিং করিনি। প্রথমে দু-একদিন দাঁড়িয়ে ব্যাটিং করেছি। টেকনিক্যাল কিছু বিষয় ভালোভাবে হচ্ছিল না। ফাহিম (নাজমুল আবেদীন ফাহিম) স্যার ছিলেন, এরপর ভারতীয় কোচ ওয়াসিম জাফর (বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং কোচ) একদিন দেখছেন। তো টুকটাক সবার সঙ্গেই কথাবার্তা (টেকনিক নিয়ে) বলছি। কোচেরা সবাই এখন ব্যস্ত, কেউ ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। তার মধ্যেও ফাহিম স্যার আমাকে দুইদিন সময় দিয়েছেন।

সংবাদ প্রকাশ: দল অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ খেলছে। আপনারও সেখানে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আপনি এখন দেশে দলে ফেরার লড়াই চালাচ্ছেন। বিষয়টা খারাপ লাগছে কিনা?

মুনিম শাহরিয়ার: খারাপ তো লাগবেই। বরং খারাপ না লাগাটাই অস্বাভাবিক। এই খারাপ লাগাটা আমার অনুশীলেন প্রভাব যেন না ফেলে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আমি আসলে এই খারাপ লাগাটাকে পাশে সরিয়ে নিজের উন্নতির জন্য কাজ করছি।

সংবাদ প্রকাশ: ওপেনিং নিয়ে দলে বেশ রদবদল হচ্ছে। বিষয়টা ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে পিছিয়ে দেয় কিনা?

মুনিম শাহরিয়ার: সবাইকেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সুযোগ দিয়ে দেখা হচ্ছে কে কেমন করে। যারা ভালো করছে না, তারা দলের বাইরে চলে যাচ্ছে। তো মানসিকভাবে কোনো প্রভাব ফেলছে না। তবে আমি জানি আমি যদি ভালো করি আমার সুযোগ আসবে সামনে। আর কে কী চিন্তা করে, ওটা আসলে আমি বলতে পারব না।

সংবাদ প্রকাশ: নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনাটা কী?

মুনিম শাহরিয়ার: এখন তো জাতীয় দলের বাইরে, বর্তমানে জাতীয় দলে ফেরাটাই আমার লক্ষ্য। অবশ্যই ভালো পারফর্ম করে। ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ তো আসলে বলা যায় না। আরও অন্তত ১০ বছর জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা আছে।

সংবাদ প্রকাশ: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

মুনিম শাহরিয়ার: এটা লং প্রসেস, শর্ট টাইম চিন্তা করলে তো হবে না। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, তাতে লম্বা সময়ের জন্য চিন্তা করা দরকার। আমি তো আশা করব অবশ্যই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হোক, একজন বাংলাদেশি হিসেবে কে না চায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশন বাংলাদেশের জন্য আসলেই চ্যালেঞ্জিং। তবে আমার চাওয়া অন্তত প্রথম রাউন্ড (সুপার টুয়েলভ) ভালো করুক। বড় দু-একটা দলকে যদি হারিয়ে দিতে পারি, এখনো তিনটা খেলা আছে। অন্তত সেমিফাইনালে যেন উঠতে পারি। এটাই আমার চাওয়া।

সংবাদ প্রকাশ: আজকে (২৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা দেখেছেন কি?

মুনিম শাহরিয়ার: অনুশীলনে আসার আগে বাংলাদেশের (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) বোলিং দেখেছি। কিন্তু ব্যাটিং দেখা হয়নি। এরপর ব্যাটিং করার সময়ে আসলে ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে, তবে বাসায় গিয়ে ইউটিউবে দেখব।