যেভাবে টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের উত্থান

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২, ০৭:২৫ পিএম

যুদ্ধ বিদ্ধস্ত আফগানিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। গেল বছর তালেবানরা আফগানিস্তান দখলের পর থেকে দেশটিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এছাড়া প্রায় দুই ডজন খেলোয়াড়ের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিকত্ব ও ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।  

মহিলাদের বিরুদ্ধে তালেবানের কট্টর অবস্থানের কারণে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ ঝুঁকিতে পড়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু এতসব প্রতিকূলতা সত্যেও আফগানিস্তান ক্রিকেট দল দমে যায়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করছে।  

গত ২৭ আগস্ট শুরু হয়েছে এশিয়া কাপ। বেশিরভাগ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা আশা করেছিলেন যে আফগানিস্তান শক্তিশালী পারফরম্যান্স করবে। তাই হয়েছে। আফগানরা গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই অভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে ধরাশায়ী করে। তারপর বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে সুপার ফোরে প্রথম দল হিসেবে উঠে যায়।

ক্রিকেটে উদীয়মান শক্তি আফগানিস্তান বর্তমানে আইসিসি টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যানে দশম স্থানে রয়েছে। তারা শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) এশিয়া কাপের প্রথম সুপার ফোরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে। এদিকে শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের দুটি বড় জয়ই বলে দেয় (দুই দলই র‍্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তানের চেয়ে ওপরে যথাক্রমে ৮ এবং ৯) আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টিতে কতটা দ্রুত উন্নতি করছে।

কীভাবে আফগানরা ডার্ক হর্স হয়ে উঠল সেই গল্প শোনা যাক।

আক্ষরিক অর্থে ডার্ক হর্স শব্দটিকে অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘কালো’ বা ‘অন্ধকার ঘোড়া’। যার মূল অর্থ, এমন কোনো প্রতিযোগী যার ব্যাপারে লোকের খুব একটা উচ্চাশা থাকে না। কিন্তু দিনশেষে সবাইকে চমকে দিয়ে সে-ই সফল হয়।

এইত ২০১৬ সালের কথা। তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হতবাক করেছিল আফগানিস্তান। সুপার টেনের সেই ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের ৬ রানে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল দলটি। তখন থেকেই ধারাবাহিকভাবে তারা ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সুনাম কুড়াতে থাকে এবং সবার নজরে আসে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফগানিস্তানের উত্থান সামগ্রিকভাবে খেলাধুলার সবচেয়ে বড় সাফল্যের গল্প। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি সর্ব প্রথম ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেয়। সেটিই ছিল আইসিসি ইভেন্টে তাদের প্রথম অংশগ্রহণ। পরে তারা ২০১৭ সালে টেস্ট মর্যাদা লাভ করে।

আফগানিস্তান তাদের দ্রুত সাফল্যের জন্য এ সময়ের কিছু সেরা টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়ের কাছে ঋণী। তাদের মধ্যে রয়েছেন, রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রহমান এবং নাজিবুল্লাহ জাদরানের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগসহ (আইপিএল) বিশ্বজুড়ে অনেক ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলেন আফগানরা। সেখানে তারা নিজ নিজ নামে বিখ্যাত। রশিদ এবং মুজিব বর্তমানে টি-টোয়েন্টি বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে যথাক্রমে তৃতীয় এবং নবন স্থানে আছেন। যেখানে অধিনায়ক নবী আইসিসি টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে রয়েছেন।

টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের সামগ্রিকভাবে সম্ভ্রান্ত রেকর্ড রয়েছে। তারা ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০১টি ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে ৬৮টি জিতেছে এবং ৩০টি হেরেছে ও একটি টাই হয়েছে। এতে আফগানদের জয়ের পরিসংখ্যান দাঁড়ায় ৬৭.৮২% এবং তারা টি-টোয়েন্টিতে সেরা দশ দলের একটি।

ক্রিকেটের সঙ্গে আফগানিস্তানের উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পরিচিত হলেও তা প্রাতিষ্ঠানিকতা পায় ১৯৯৫ সালে। এ বছরই প্রথম আফগানিস্তান ক্রিকেট ফেডারেশন গঠিত হয়। এরপর ২০০১ সালে আইসিসির সহযোগি সদস্য এবং ২০০৩ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সদস্য হয় আফগানিস্তান।