দীর্ঘ আড়াই মাসের রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা এখন আর উত্তেজনায় সীমাবদ্ধ নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক অভিযানের ঘোষণার ফলে এই সংকট এখন রূপ নিয়েছে যুদ্ধে। ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাচ্ছে রুশ সামরিক বাহিনী। এই সংকট যে দ্রুতই সমাধান হচ্ছে না, তার ইঙ্গিতও মিলেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট অর্থনীতি কিংবা রাজনীতির মত প্রভাব ফেলবে ফুটবলেও। এ বছরের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে হওয়ার কথা আছে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে। তবে বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে ম্যাচটি রাশিয়াতে হবে কিনা সংশয় তৈরি হয়েছে।
উয়েফা জানিয়েছে, আপাতত টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তারা, এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
করোনা মহামারির কারণে আগের দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু ইস্তাম্বুলে সরিয়ে নিয়েছিল উয়েফা। তবে এবার তেমন কিছু চাচ্ছে না তারা। তবে পশ্চিমাদের ক্রমাগত চাপের মুখে এবারও সরে আসতে পারে ফাইনালের ভেন্যু। উয়েফার চিন্তা, ফাইনাল খেলার স্টেডিয়ামটি যেন কোন দলের হোম ভেন্যু না হয়ে যায়।
এই ইস্যুতে সংকট অবশ্য তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যেই। ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অফিশিয়াল ভ্রমণ স্পন্সর রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান এরোফ্লট। কিন্তু অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ খেলতে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্পেন যাওয়ার পথে তাদের বিমান ব্যবহার করেনি ম্যানইউ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাইরেও প্রভাব রাখবে চলমান সংকট। মার্চেই পোল্যান্ডের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে খেলতে যাওয়ার কথা রয়েছে রাশিয়ায়। এই ম্যাচটা হবে কি না, হলেও কোথায় হবে এ নিয়েও দ্বিধা তৈরি হয়েছে। এই ম্যাচে রাশিয়া জিতলে ঘরের মাঠে তাদের খেলার কথা সুইডেন অথবা চেক রিপাবলিকের সঙ্গে।
ইউক্রেনও এখনও টিকে আছে ব্শ্বিকাপ খেলার দৌড়ে। তারা ম্যাচটা খেলবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে, এই ম্যাচের জয়ী দল মাঠে নামবে ওয়েলস অথবা অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে। রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশই বিশ্বকাপ খেললে ফিফার জন্য পরিস্থিতিটা আরও বেশি জটিল হয়ে যাবে। যদিও এর আগে ১৯৮২ বিশ্বকাপে ফকল্যান্ড যুদ্ধের পর একসঙ্গে খেলেছিল ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা।
ফুটবল পড়তে পারে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখেও। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন গাজপ্রম ২০১২ সাল থেকে উয়েফার বড় স্পন্সরদের একটি। গত মে মাসে বার্ষিক ১৫ মিলিয়ন ডলারে উয়েফার সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে তারা। গাজপ্রমের প্রধান নির্বাহী আবার উয়েফার নির্বাহী কমিটির সদস্য। ইতোমধ্যেই উয়েফাকে এই সম্পর্ক ছিন্ন করতে আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ লেবার এমপি ক্রিস ব্রেন্ট।
ইংলিশ ফুটবলে প্রভাব আছে আরও। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দল চেলসির মালিকানা ২০০৩ সাল থেকেই রাশিয়ান ধনকুবের রোমান আব্রাহোমাভোচির দখলে। যদিও সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল না তার নাম। তবে ব্রিটিশ সরকারের লক্ষ্য তিনি হতেই পারেন।
চারদিক থেকে তৈরি হওয়া এই সংকট। পশ্চিমা ও রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থান, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত- প্রভাব ফেলবে মানুষের জীবনে। অর্থনৈতিক ও রাজনীতিক সংকট তৈরি হবে, এই সংকটের প্রভাব থাকবে ফুটবলেও-এটি এখন বলাই যায়!