খেলা নিয়ে ভারতের রাজনীতি করার বিষয়টা অনেক পুরনো। তার মধ্যে আবার ক্রিকেটকে তো ভারতের সকল সরকারই একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টি দিয়ে দেখে। ভারত পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতে যায় না। কিন্তু পাকিস্তানকে তাদের দেশে যেতে বারণও করে না। ফুটবল, হকি, দাবা, টেনিস, বক্সিং সহ সকল খেলায় পাকিস্তানে দল পাঠালেও শুধুমাত্র ক্রিকেটে ভারত সেই দেশে দল পাঠায় না।
২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরে শহীদ আফ্রিদি, ওমর গুল, শোয়েব আখতার, মিসবাহ উল হক, সোহেল তানভীর সহ পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতির কারণে এখন আর তারা ভারতে আসার সুযোগ পান না। আর বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা সুযোগ পেলেও তা নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প, উপেক্ষার কাহিনী। এবার মেগা নিলামে নাম লেখানো বাংলাদেশের ১২ জনের কাউকেই দলে রাখা হলো না আইপিএলে। যার উত্তর খুঁজে পায় না বাংলাদেশেরও কেউই।
প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের থাকা উচিত সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। সাধারণ লোকজন এটাই চায়। কিন্তু ভারতের নীতিনির্ধারকরাই সবকিছুই উলোট-পালোট করে দিয়েছেন। বিনা কারণে সৃষ্টি হয়েছে গভীর দূরত্ব। আর সেটা ভারতেরই সৃষ্ট।
অবশ্য বাংলাদেশের কেউ কেউ মনে করেন, আমাদের ক্রিকেটারদের মান খারাপ এবং তারা সুযোগ পেয়েও অতীতে প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে ভারতের দলগুলো তাদের প্রতি আগ্রহী হয় না। সেটা ভুল। কারণ, গত আসরে বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান ৯ ম্যাচে ১৪টি উইকেট নিয়ে ভারত ছাড়ার আগে ছিলেন শিকারীদের তালিকার শীর্ষে। তবে দেশের আন্তর্জাতিক ব্যস্ততায় পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে বিসিবির অনুমতি না দেয়া অবশ্যই একটি কারণ হতে পারে। তাই বলে অখ্যাত খেলোয়াড়রা যেখানে কোটি কোটি রুপি পেয়েছেন, সেখানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, কাটারমাস্টার মোস্তাফিজ, সময়ের দুরন্ত পেসার তাসকিন আহমেদ, নির্ভরশীল ওপেনার লিটন কুমার দাস, স্পিডস্টার নাহিদ রানা- কী এতোই অযোগ্য আইপিএলে?
১০ ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলে মেগা নিলামে ১৮২ খেলোয়াড় কিনতে খরচ করল ৯২০ কোটি রুপি। অথচ ৩০ লাখ থেকে দুই কোটি রুপির ১২ বাংলাদেশির কেউই দল পেলো না। সাকিবের নামই ওঠেনি নিলামে। মোস্তাফিজ ও রিশাদের নাম উঠলেও আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি।
ভারতীয়দের চোখে আসলে ক্রিকেট রাজনীতি বড় বিষয়। ভারত সফরে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ বয়কটের ডাক দিয়েছিল ভারতের কট্টরপন্থী সংগঠন হিন্দু মহাসভা। তবে বিসিবিও অনেক সময় এর জন্য দায়ী ছিল। তাসকিন আহমেদ দু’বার দল পেয়েও বিসিবির বাধার কারণে আইপিএল খেলতে পারেননি। সবকিছুর পরও বাংলাদেশের কাউকেই ছাড়া আইপিএলকে কতটা গ্রহণ করবে এ দেশের মানুষ, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।