জনগণের বিপুল অংশের মনন সাম্প্রদায়িক

স্বকৃত নোমান প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২১, ০৩:৩৬ পিএম

সারা দেশে কী হলো আজ? চট্টগ্রামে কী হলো? নোয়াখালীতে কী হলো? কতজন মরল? কতগুলো মন্দির-মণ্ডপে হামলা হলো? পত্রিকাগুলোর কোথাও কি কোনো খবর আছে? নেই। টিভিগুলো কি সংবাদ পরিবেশন করছে? না। কেন নেই, কেন করছে না, তার উত্তর আমাদের সকলের জানা। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও নোয়াখালীতে যা যা ঘটল, তার দায় কে নেবে? ধর্মমন্ত্রী, না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? কে নেবে দায়?  

কুমিল্লায় মণ্ডপে কোরান রাখার ঘটনা যে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিছু গর্দভ বাঙালি মুসলমান এই ষড়যন্ত্রে পা দিল। শুধু বাঙালি মুসলমান নয়, পৃথিবীর নানা দেশের বিপুল মুসলমান এই ধরনের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেয়। তারা ষড়যন্ত্রের গুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মুসলমান পৃথিবীর এমন একটি ধর্মসম্প্রদায়, যাদেরকে নিয়ে সবাই খেলে, সবাই তাদেরকে খেলে দেয়, তারা দাবার গুঁটি হয়ে যায়, অথচ তারা খেলতে জানে না, খেলাতে জানে না, তারা কিছুই টের পায় না। টের তারা পাবে কীভাবে? তাদের মগজে তো মধ্যযুগ, তাদের মননে তো অন্ধকার। এই অন্ধকার দূর করার কোনো প্রচেষ্টাই তাদের নেই।

এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এই যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটল, তা কি গোয়েন্দারা জানত না? জানলে কেন সরকার পরিস্থিতির সামাল দিতে পারল না? কোথায় ছিল ছাত্রলীগ, যুবলীগ? তারা কেন মাঠে নামল না? সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে কি তারা নত হয়ে গেল? তারা কি মাথা বিক্রি করে দিল?  স্বীকার করতেই হবে, এটা আমওয়ামী লীগ সরকারের অনেক বড় ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার দায় সরকারকে নিতেই হবে। এড়ানোর সুযোগ নেই।

হে আওয়ামী লীগ, সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক আছে। সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে যে কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতাচ্যূত করে দেওয়া যায়। গদি থেকে হটিয়ে দেওয়া যায়। এই সত্যটুকু কেন বুঝতে পারছ না তোমরা? মানুষের মনন অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা কি আছে তোমাদের? নাই। যদি জনগণকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তোলা যেত, তবে সাম্প্রদায়িক গুঁটিবাজরা যতই ষড়যন্ত্র করুক, তা জনগণ নস্যাত করে দিত। জনগণের বিপুল অংশের মনন সাম্প্রদায়িক। কতটা সাম্প্রদায়িক, তা এসি রুমের শীতল কক্ষে বসে বোঝা যাবে না। তাই সাম্প্রদায়িক গুঁটিবাজরা তাদের নিয়ে খেলছে, খেলতে থাকবে।

সমুদ্রে বাতিঘরের প্রয়োজন হয়। নইলে নাবিক দিক হারায়। সমাজও সমুদ্রের মতো। তারও বাতিঘরের দরকার আছে। নইলে সমাজ পথ হারায়। এই সমাজ পথ হারিয়েছে। সমাজের বাতিঘরের প্রয়োজন। কী সেই বাতিঘর? খুঁজে বের করুন। এখনো সময় আছে।

এখনো সময় আছে, জনগণের মনন গঠনের উদ্যোগ নিন। অসাম্প্রদায়িক মনন গঠনের জন্য যা যা করা দরকার তা তা করুন। কিন্তু কীভাবে জনগণের মনন গঠন করবেন? কীভাবে মানুষের মন থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করবেন? তার উপায় আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। না জানলে যারা জানে তাদের সঙ্গে বসুন। উপায় বের করুন। নইলে এই দেশ হায়েনার চারণক্ষেত্রে পরিণত হবে। তারা মানুষের রক্তমাংস ঠুকরে ঠুকরে খাবে। কোনো কিছু দিয়ে তখন আর শান্তি রক্ষা করা যাবে না।

আর হে কবি, হে সাংবাদিক, হে সাহিত্যিক, এই বর্বরতম সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে যদি আপনি না দাঁড়ান, যদি প্রতিবাদ না করেন, তবে জেনে রাখবেন, আপনার এসব শিল্প-সাহিত্যচর্চা সম্পূর্ণ অর্থহীন। একদিন আপনার প্রাণ নিতে খোলা ছুরি হাতে এগিয়ে আসবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা। তখন আপনি শত চিৎকার করেও কাউকে পাবেন না।