সাহিত্যে নোবেলজয়ী জন ফসে ও তার কয়েকটি কবিতা

জ্যোতির্ময় নন্দী প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩, ১০:২৩ এএম

সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নরওয়ের নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক ও কবি জন ফসে। তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে সমগ্র সাহিত্যকর্মের জন্য। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ফসেকে সাহিত্যের এই সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা হলো ‘তার নব নব উদ্ভাবনী সব নাটক আর গদ্যের জন্য, যেগুলো অনির্বচনীয়কে ভাষা দিয়েছে।’

জন ফসের পুরো নাম ইয়ুন উলাভ ফসে (Jon Olav Fosse), জন্ম ১৯৫৯-এর ২৯ সেপ্টেম্বর। নরওয়েতে হেনরিক ইবসেনের পর ফসের নাটকই সর্বাধিক মঞ্চস্থ হয়েছে। অনেক নাট্য সমালোচক তাকে ‘নতুন হেনরিক ইবসেন’ও বলে থাকেন।

ফসের সাহিত্যকর্ম ইউরোপ মহাদেশে দীর্ঘকাল ধরে প্রশংসিত হয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি দেখা গেছে, ইংরেজি-ভাষাভাষী জগতে তার পাঠকের সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে।

ফসের লেখা স্বল্পসংখ্যক নাটকগুলোকে অনেকদিন ধরেই সাবেক দুই নোবেল বিজয়ী নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার আর স্যামুয়ের বেকেটের কাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে আসছিল। তিনিও নোবেল পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন, এ নিয়েও কানাঘুষা চলছিল অনেক দিন ধরে। ২০১৩-তে ফসে নোবেল পেয়েই যাচ্ছেন ধরে নিয়ে তার নামে বিপুলসংখ্যক বাজি ধরা শুরু হয়ে যাওয়ায় বুকমেকাররা শঙ্কিত হয়ে একপর্যায়ে বাজি ধরা সাময়িক বন্ধ করে দেয়। অবশ্য পরে তাদের এ ব্যবস্থা নিরর্থক প্রতীয়মান হয়, যখন দেখা যায় যে সে বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কানাডার গল্পকার অ্যালিস মুনরো।

নোবেল পুরস্কার হিসেবে পদক আর মানপত্র ছাড়াও ফসে পেয়েছেন ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (৯ লাখ ৯১ হাজার মার্কিন ডলার)। সেই সঙ্গে তার বইপত্রের বিক্রির পরিমাণও যে বহুগুণ বেড়ে যাবে, সে তো জানা কথাই।

জন ফসে সম্পর্কে আমার তেমন বিশেষ কিছু জানা নেই। তার কোনো বইপত্রও পড়িনি। যদিও নাটক আর গদ্যসাহিত্যের জন্যই মূলত তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তবে তিনি কবিতাও লিখে থাকেন। এখানে তাঁর লেখার নমুনা হিসেবে তিনটা ছোট কবিতা অনুবাদ করে দেওয়া হলো মূল নরওয়েইয়ান কবিতার ইংরেজি ভাষান্তর থেকে।


হালকা হাওয়ায় নৌকার মতো
তুমি আর আমি
তুমি আর চাঁদ
তুমি আর বাতাস
তুমি আর তারা
সম্ভবত
মুখোমুখি যত দুর্গন্ধের  
বন্দি করে রাখা মাটির গভীরে
পচতে থাকা
লাশগুলোর 
অন্যদের, আমার নিজের মতোই
অথবা যারা পুড়িয়ে ফেলে
তাদের নিরাশ আশায়
(ব্যথা ছাড়া, হ্যাঁ অবশ্যই)
হ্যাঁ, হালকা হাওয়ায় নৌকার মতো  


শুধু জানি
গান, সমুদ্রের গান
গড়িয়ে নামে খাড়া পাহাড় থেকে
আর সারা আকাশ জুড়ে
আলোর ঝিলিমিলির মতো নীল উড়ালে
আমরা যেখানে একসাথে আছি সেদিকে
আর যেখানে আমরা কিছু বলি না


শুধু জানি 
পাহাড় তার নিশ্বাস ধরে রাখে
সেখানে গভীর একটা নিশ্বাস ছিল
আর তারপর সেখানে দাঁড়িয়ে গেল পাহাড়
তারপর সেখানে দাঁড়িয়ে গেল পাহাড়গুলো
আর এভাবেই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়গুলো
আর ঝুঁকে তাকাও নিচের দিকে 
আরও নিচের দিকে
তাদের নিজেদের ভেতরে
আর ধরে রাখো তাদের নিশ্বাস 
যখন আকাশ আর সমুদ্র
টোকা আর তাল দেয়
পাহাড় ধরে রাখে তার নিশ্বাস


রাতের স্তোত্রগীতি 
এমন একটা পৃথিবী আছে যেটা হাট করে 
খুলে দেয় কালো পাতালের রাত 
আর দেহ-মন লুকিয়ে রাখে 
যতক্ষণ না বোধ করে কেউ অভাব
একটা রাত আছে যেটা দেখা করে তোমার সঙ্গে
সুন্দর আর কোমল হয়ে গ্রহণ করে তোমাকে
এবং দেয় বিশ্রাম নিতে তোমার প্রাপ্য সম্মানের সাথে
হাত, পা আর আত্মাকে ঊর্ধ্বলোকে উঠিয়ে
কারণ মাটিতে ঈশ্বরই সবকিছু 
ওপরে ওই জমজমাট রাতে
তোমার আত্মা তাঁরই, তুমিই তাঁর যোগ্য
তুমি উজ্জ্বল করে তোলো তাঁর স্বর্গের ভালোবাসা