সংকটের মাত্রাটা বোঝা দরকার

আলী রীয়াজ প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২২, ১২:৫৫ পিএম

বাংলাদেশের চাওয়া সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ‘বেইল আউট’ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় ৯ দিন ধরে আলোচনার পর এই অগ্রগতির ফলে এখন দ্বিতীয় প্রতিনিধিদল ঢাকা আসবে। ইতিমধ্যেই আইএমএফের শর্তগুলো সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে যা বলা হচ্ছে সেগুলো নতুন কিছু নয় এই অর্থে যে, এগুলো নিয়ে দেশের ভেতরে কয়েক বছর ধরেই বলা হচ্ছিল। যারা বলছিলেন তাঁদের কথা সরকার শোনেননি। সরকার সমর্থকরা এই বক্তব্যগুলোকে ‘দেশবিরোধী’, ‘উন্নয়নবিরোধী’, এমনকি  ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বলেও অভিহিত করেছেন। দুর্ভাগ্যজনক যে, যাদের এই প্রশ্নগুলো করা দরকার ছিল, সেই অর্থনীতিবিদদের এক বড় অংশ এই প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেছেন।

আইএমএফের প্রাথমিক শর্তগুলোর মোদ্দা কথা হচ্ছে দুর্নীতি, বেহিসেবি ব্যয় এবং অবাধ লুণ্ঠনের যে মহোৎসব চলেছে, তা বন্ধ করতে হবে।  ঠিক এই ভাষায় আইএমএফ বলতে পারে না। তাদের সেই এখতিয়ার নেই। ফলে তাদের ভাষায় এখন হিসেব চাওয়া হয়েছে জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকি কোথায় কীভাবে ব্যয় হয়েছে। কোভিড মোকাবেলায় প্রণোদনার নামে যে টাকা দেওয়া হয়েছে, তার হিসাব কোথায়। আর মেগা প্রকল্পে ‘অতি-মূল্যায়ন’, সহজ ভাষায় অতিরিক্ত ব্যয় কেন হয়েছে। এগুলোতে স্বচ্ছতার কথাও বলা হয়েছে। এই সব শর্ত আলোচনার প্রথম ধাপেই এসেছে, সামনে আর কী কী তাতে যুক্ত হবে, আমরা তা জানি না।

শর্তগুলোর যৌক্তিকতা আছে কি না, সেটা বিবেচনা করুন। আইএমএফের কাছে অর্থ নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে কেন, সেটা ভাবুন। আর এটাও মনে রাখুন সরকার কেবল যে আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংকের কাছেই টাকা চেয়েছে তা নয়, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারদের কাছেও বাংলাদেশ অর্থ চেয়েছে। তার পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বিগত বছরগুলোতেও বাংলাদেশ এই ধরনের ঋণ নিয়েছে।  অথচ বলা হয়েছে উন্নয়নের রেলগাড়ি বুলেট গতিতে এগোচ্ছে।

একটি অস্বচ্ছ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই সব ঋণ নেওয়া হচ্ছে। এর জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। এমনকি সাজানো সংসদে এই নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা পর্যন্ত হচ্ছে না। এই সব হচ্ছে এমন এক সময়ে যখন আমরা জানি যে ইতিমধ্যে যে ঋণ আছে, সেগুলোর কারণে আগামী তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। এই সব অর্থ ফেরত দেওয়ার দায় জনগণের। আগামীতে প্রতিটি পয়সা হিসাব করে ফেরত দিতে হবে। কিন্তু এই নিয়ে তাদের জানানোর পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। সংকটের মাত্রাটা বোঝা দরকার, সামনে কী ধরনের পরিস্থিতির সূচনা হতে পারে, সেই বিষয়ে ভাবা দরকার।