সিলেটের বন্যা দেখে অনেকগুলো পুরনো বিষয় নতুন করে ফেরত আসলো—
১. পানিকে সরে দিতে রাস্তা কাটতে হচ্ছে। মানে মানুষের কানে ধরে প্রকৃতি তার জায়গা করে নিয়েছে। অথচ পানি সরার এই জায়গার কথা ভেবে নির্মাণ কাজ করলে মানুষ ও প্রকৃতি উভয়েরই বিপুল উপকার হতো।
২. বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ৩০ মে তারিখে বিপুল বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে। সেটা কি জনসাধারণ জানতেন? কতটুকু জানতেন? না জানলে কেন জানতেন না?
৩. যে কোনো দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতেই পারে। সেটার জন্য যে প্রস্তুতি থাকার কথা, তা কি ন্যূনতম মাত্রায় ছিল? বন্যাপ্রবণ দেশে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য জলযান ইত্যাদি নিশ্চিত হবার কথা, সেটার অভাবে মানুষকে হাহাকার করতে হয়েছে।
৪. আগামী দিনগুলোতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে যে বিপুল বন্যা আর পলি আসতে থাকবে, আমাদের বানানো রাস্তা-সেতু- অবকাঠামোগুলো সেটার জন্য কতটুকু উপযুক্ত?
আরও বড়, আরও বেশি রাস্তা এবং সেতুর জন্য আহাজারি করতে দেখি লোকজনকে, দুর্নীতিপরায়ণ নীতিনির্ধারকরাও সেই মুলা ঝুলিয়ে দেশ শাসন করে চলেছে। নিশ্চিতভাবেই আমাদের প্রয়োজন হলো জলের উপযুক্ত অবকাঠামো, জলের উপযুক্ত পরিবহন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জেলাশহরগুলোতে এমন হাসপাতাল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বানানো বেশি জরুরি যাতে মানুষ বাইরে না যায়। উন্নতিটা দ্রুত টাকা পয়সা নিয়ে দূরে ভেগে যেতে পারায় না। উন্নতিটা কার্যকর হয় নিজের জায়গাতে যেন সব কিছুর সমৃদ্ধি হলে। বরিশাল খুলনা ফরিদপুরের মানুষকে চিকিৎসার জন্য, শিক্ষার জন্য ঢাকায় দৌড়াতে না হলে, ফেরিঘাটে আধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকলে, জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ করা ইজারাদারদের দুর্নীতি আর অনিয়ম না থাকলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলেই বিপুল অর্থনৈতিক বিকাশ হতে পারতো।
নদী এবং হাওরকে যতটা অবহেলা করে এই ভয়াবহ বন্যাকে আমরা পেলাম, সেটার হয়তো সূচনা মাত্র। এই বছরই পরপর দুবার সিলেট অঞ্চলে বন্যা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে, পরিসংখ্যান আর প্রকৌশল বিদ্যার সম্মোহনী বিদ্যার আড়ালে তারা পায়ের নিচের মাটিই কেড়ে নিচ্ছে।
কিন্তু এই গোটা কয়েক ধূর্ত মানুষের কারণে কষ্ট পাচ্ছেন এবং পাবেন দেশের অজস্র মানুষ।