ফারুক হোসেন, বাংলাদেশের সিলেট সদরে উপজেলার বাসিন্দা। বাংলাদেশের ব্যস্ত ব্যবসায়ী। স্ত্রী, পুত্র যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। পরিবারের সদস্যদের দেখতে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য যাওয়া-আসা করেন। মাসখানেক আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছেন। বিমানবন্দরে নেমেই যেতে হয়েছে হোটেল কোয়ারেন্টিনে। ১০ দিনে গুনতে হয়েছে ১৭৫০ পাউন্ড।
শুধু ফারুক নন, যারাই লাল তালিকায় থাকা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করছেন তাদের বহন হোটেল কোয়ারেন্টিন খরচ। বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টিন খরচের কারণে গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বাংলাদেশ যাওয়া।
ফারুক হোসেন বলেন, বিমানে ওঠার আগে করোনা টেস্ট করলাম, এখানে এসেও টেস্ট করলাম। প্রতিবারই নেগেটিভ এসেছে। নেগেটিভ আসার পরও হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে।
ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা বলছেন, হোটেল কোয়ারেন্টিনের কারণে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা দেশে কম যাচ্ছেন, এত বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা কমেছে, তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া ৫০০ পাউন্ড বাড়িয়ে ২২৮৫ পাউন্ড করা হয়েছে হোটেল কোয়ারেন্টিন খরচ।
তারা আরও জানান, প্রতি বছর জুলাই, আগস্ট মাসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকেটের বিপুল চাহিদা থাকলে এবার অনেক কম। বিমানের হিথ্রেুা-সিলেট রুটে যাত্রী কম হওয়ায় ফ্লাইট সংখ্যাও কমেছে।
যুক্তরাজ্যের লুটনের বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের অনেক দিন দেশে যাওয়া হয় না। মনে করেছিলাম আগামী মাসে দেশে যাব। কিন্তু ফেরার সময় হোটেল কোয়ারেন্টিনের বাড়তি খরচের কারণে দেশে যাওযার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশ সরকারের উচিত এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা।
লন্ডনের বাসিন্দা এমরান আহমদ বলেন, “পরিবার নিয়ে দেশে যাওয়ার কথা ছিল গতমাসে। ফেরার সময় কোয়ারেন্টিনে ১০দিন বন্দি থাকার পাশাপাশি দিতে হবে বাড়তি প্রায় ৭\৮লাখ টাকা, এজন্য এবছর দেশে যাওয়া সিদ্ধন্ত বাতিল করেছি। সব কিছু ঠিক হলে আগামী বছর দেশে যাব।”
বাংলাদেশের জগন্নাথপুর উপজেলার সাবেক ভাইসচেয়ারম্যান মোক্তাদীর আহমদ মুক্তা জানান, অন্যান্য বছর জুলাই-আগস্ট মাসে রেকর্ড সংখ্যক প্রবাসী মানুষ বাংলাদেশে আসতেন। হোটেল কোয়ারেন্টিনের ঝক্কিঝামেলার বিষয়ের কারণে এ বছর প্রবাসীদের দেশে আসা কমেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে, গ্রাম পর্যায়ে ভ্যাকসিন দিচ্ছে সরকার। যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত আমাদের করোনা পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে লাল তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া।
যুক্তরাজ্যের হিলসাইড ট্রাভেল এজেন্সির কর্ণধার হেলাল উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশ লাল তালিকায় থাকার কারণে প্রবাসীদের দেশে ফেরা কমেছে। ১০ দিন হোটেল কোয়ারেন্টিন একদিকে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। তিনি বলেন, প্রবাসীদের দেশে ফেরা কমে যাওয়ায় বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট সংখ্যাও কমেছে।