কোরবানির স্পিরিট কি আমরা বুঝতে পারছি

তানিয়া কামরুন নাহার প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৪, ০১:৪৭ পিএম

গরুর মাংস সারা পৃথিবীতেই প্রিয় খাবার। কত রকম এর রেসিপি, ইয়ত্তা নেই। তারপরেও কেউ কেউ এ মাংস খায় না। কেউ ধর্মীয় কারণে, কেউ স্বাস্থ্যগত কারণে,ডাক্তারের নিষেধের কারণে; আবার কেউ অভ্যাসের কারণেই খেতে পারেন না। যেমন অনেকে মাছ বা মুরগির মাংস জীবনেও খায় না। আমার ভাইকে কখনো মাছ খেতে দেখিনি, সে খায় না। আমার নানু মুরগির মাংস খেতেন না। তেমনি কেউ কেউ গরুর মাংস খাবেই না। আমার পরিচিত একজন ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হলেও শুধুমাত্র অভ্যাসগত কারণে গরুর মাংস খেতে পারেন না। এজন্য অনেক ভুল বোঝাবুঝিরও শিকার হন অবশ্য যে, তিনি হয়তো পুরোপুরি মুসলিম হতে পারেননি। অথচ নামাজ, রোজা কিছুই বাদ দেন না, শুধু গরুর মাংস খাওয়া না খাওয়া নিয়ে এমন জাজমেন্টাল হিসাব। আমি নিজেও এখন চেষ্টা করি গরুর মাংস কম খেতে, যদিও পারি না শেষ পর্যন্ত। 

আবার আমার পরিচিত এমন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী আছেন, যারা বেশ শখ করে গরুর মাংস খান। নিজের বাসায় রান্না হয় না বিধায় ঈদুল আজহায় নিজ থেকে দাওয়াত চান। এমন মানুষও রয়েছেন। গরুর মাংস খান বলে, তারা কিন্তু মুসলিম হয়ে যাননি। সারা বিশ্বেই এমন কোটি কোটি মানুষ রয়েছে। 

তারপরেও এমন ঈদের আনন্দের মধ্যে কেউ কেউ হিংসা আর ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। তারা নাকি জোর করে সবাইকে গরুর মাংস খাওয়াবেন। কারণ, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এমন ধারণা তারা মানেন না। না মানলে, না মানুক। এটা তো মানবেন, আসলে হওয়ার কথা ছিলো, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। কিন্তু হয়ে গেছে, ধর্ম যার যার, উৎসব বিত্তবানের। কালো টাকায় শো অফ করা ধনী কোরবানিদাতারা তাহলে নিশ্চয়ই তাদের চোখে বিরাট বড় মুসলিম!

একটা উৎসবের আসল স্পিরিট না বুঝে,যারা জোর করে কাউকে গরু কিংবা কাউকে শুকরের মাংস খাওয়াতে চান, তাদের মনের পশু কতটা সক্রিয়, বলাই বাহুল্য। এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের চারপাশে কম নয়। ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দিয়েই বা লাভ কী? শত গরু কোরবানি দিয়েও কি তাদের মনের পশু দূর হয়েছে? হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ দূর হয়েছে তাদের মন থেকে? যেখানে তারা নিজেরাও নিশ্চিত নন, তাদের কোরবানি কবুল হয়েছে কি না, সেখানে তাদের এত মূর্খ আস্ফালন দুঃখজনকই বটে। কোরবানি শেষে রাস্তার দুর্গন্ধটা পর্যন্ত যারা দূর করতে পারে না, এরা নাকি করবে সাম্প্রদায়িক দুর্গন্ধ দূর! তাদের মনের মধ্যেই যে দুর্গন্ধ চেপে বসে আছে, তা দূর করা বহুদূরের কথা।

তবুও ঈদের শুভেচ্ছা। নিজে কোরবানির মাংস তো খাবেনই, দরিদ্রদের, রাস্তার কুকুর, বিড়াল, কাক, চিলদেরও দেবেন। জোর করে অন্য ধর্মের মানুষদের মাংস না খাইয়ে বরং ওদের খাওয়ান। এতেও যদি আপনাদের মনের পাশবিকতা কিছুটা দূর হয়।

লেখক : শিক্ষক ও লেখক