বিশ্ব সংহতি দিবস

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

আফরিদা ইফরাত প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৩, ১২:১৭ পিএম

ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিশ্ব সংহতি দিবসের ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২৯ নভেম্বরকে ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন সংহতি দিবস হিসেবে গ্রহণ করে। এর ঠিক ১০ বছর পর, ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর ‘ইউনাইটেড নেশনস পার্টিশন প্ল্যান ফর প্যালেস্টাইন’ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এরপর থেকেই মূলত এ দিনটি ‘আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিনি সংহতি দিবস’ হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে ফিলিস্তিনকে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ও নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে ফিলিস্তিনি জনগণ যাতে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়, ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষ্য অনুপ্রাণিত করতে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন সংহতি দিবস প্রতিবছর পালিত হয়ে থাকে। চলতি বছর সারা পৃথিবীই এই দিনটি উদযাপন করবে আরও নিবেদিতভাবে।

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি ইসরায়েল-হামাসের সংঘর্ষকে ‘অতল গহ্বরের কিনারে’ বলে মন্তব্য করেছেন।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি থেকে শুরু করে খাবার ও চিকিৎসা সংকটের পরিস্থিতিতে সেখানে মানবিক সহায়তার দরজাগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন লাজারিনি। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সম্মান দেখাচ্ছে কী না এমন প্রশ্নে লাজারিনি বলেন, “আমরা এখন এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে গাজা ভূখণ্ডে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করা হচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত বা ঘরবাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। ফলে এটি হলো সম্মিলিত শাস্তি, যেটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।”

গাজার সংকটের বিষয়ে তিনি জানান, “নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর সংকটে পড়েছে ফিলিস্তিনের ২২ লাখ মানুষ, যাদের অর্ধেকই বাস্তচ্যুত। পানি নেই, ৪ হাজার মানুষের জন্য চারটি টয়লেট। মেঝেতে বা মাটিতেই তারা ঘুমাচ্ছে। আমরা (খাদের) কিনারে চলে এসেছি। পানি না থাকলে গাজায় সংকট আরও বাড়বে। আমাদের চোখের সামনে বিপর্যয় ঘটছে, সেটি আরও তীব্র হবে।”

ইসরায়েলের বোমায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে উত্তর গাজার সব হাসপাতাল। তবু হামলা থামেনি। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যতটুকু পারা যায় আহত ফিলিস্তিনিদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

আপাতত জিম্মি মুক্তির শর্তে যুদ্ধবিরতির আলোচনা কিছুটা আশা সঞ্চার করেছে। হামাস ৫০ জিম্মির মুক্তি দেবে আর ইজরায়েল ১৫০ কয়েদিকে মুক্তি দেবে। এই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও নানা বিষয়ে উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে।

যুদ্ধবিরতি চলাকালে ধাপে ধাপে ৫০ জিম্মি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেবে হামাস। প্রতিদিন ১২-১৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে। অন্যদিকে নিজেদের কারাগারে আটক প্রায় ১৫০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। চুক্তিতে সই না করলেও মিসরও এ চুক্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। হামাস যে ৫০ জনকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে তিনজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এ চার দিন গাজায় যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। যুদ্ধবিরতি চলাকালে লেবাননের হিজবুল্লাহও শান্ত থাকবে। চার দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর আরও তিন দিন তা বাড়ানো হতে পারে। তখন প্রতিদিন ১০ জন করে বন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস।

তবে উৎকণ্ঠার প্রসঙ্গটি ভুলে গেলে চলবে না। ফিলিস্তিনের প্রতি যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে তার বিচার ও যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি পশ্চিমা গণমাধ্যমকে মাথায় রাখতে হবে। যদিও পুরো সময় তারা অনেকাংশে মানসিক হতাশার বৃত্তে ঝালিয়ে রেখেছেন। আমরা শান্তি চাই।

লেখক : সংবাদকর্মী