তামিম কেন ক্রিকেট-দ্বীপ থেকে দূরে

অঘোর মন্ডল প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৩, ০৯:৫৫ এএম

তামিম ইকবাল দেশজ ক্রিকেট আইকনদের তালিকা করলে একটু ওপরের দিকেই থাকবেন। ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান। টেস্টে লর্ডসে সেঞ্চুরি। অনার বোর্ডে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে তার নামটাই আছে। তার ক্রিকেটীয় মুকুটে সাফল্যের অনেক পালক। আবার সেখানে অনেক কাঁটাও আছে! ২০০৭ সালে জীবনের প্রথম বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে জহির খান-ইরফান পাঠান-হরভজনদের বোলিং তছনছ করে দিয়েছিলেন পোর্ট অব স্পেনে। ভারতকে বিষণ্নতার চাদরে মুড়ে বিশ্বকাপ থেকেই বিদায় করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে কুইন্স পার্ক ওভালের ওই ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য দারুণ এক স্মৃতি। এবার ২০২৩-এ ভারত বিশ্বকাপের প্রায় মাঝপথে এসে মনে হচ্ছে ইতিহাসবিমুখ একটা প্রজন্ম বিশ্বাসই করবে না বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েছিল!

কারণ, এরা পুরোনো ইতিহাস মনে রাখার দায় নিয়ে বেড়ে ওঠেনি। কিন্তু সাংবাদিকদের যে ইতিহাসের দরজায় মাঝেমধ্যেই টোকা মারতে হয়। এবার পুনেতে ভারত যেভাবে দুমড়ে-মুচড়ে দিল, তাতে মনে হলো, কোচ হাথুরুসিংহের তারুণ্যনির্ভরতা মুখ থুবড়ে পড়েছে! যেমন গ্রেগ চ্যাপেলের যুব নীতি আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার বলি হয়েছিল ভারত ২০০৭-এ। গ্রেগ চ্যাপেলের সেই দলে যিনি অধিনায়ক ছিলেন, সেই ভদ্রলোককে টেলিভিশনের পর্দায় এবার বারবার দেখাচ্ছিল ভারতীয় দলের ড্রেসিং রুমে কমলা রঙের টি-শার্ট পরে বসে আছেন। টেনশন-উচ্ছ্বাস কোনো কিছু তার মনোজগতে কাজ করেছে বলে মনে হয়নি তার শরীরের ভাষায়। কিন্তু ২০০৭ বিশ্বকাপের অনেক ইমেজারি ফিরে আসে তাকে দেখে। বাংলাদেশের কাছে হেরে ভারতের বিশ্বকাপ স্বপ্ন সলিল সমাধি হওয়ার পর রাহুল দ্রাবিড় সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তাকে দেখে মনে হয়েছিল যে কোন সময় কেঁদে দেবেন! একটা দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষার ঢেউ ছিল আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে হারে সেই স্বপ্ন পাতালে ঢুকে পড়ে! তার দায়ভারের যন্ত্রণা তা ফুটে উঠেছিল রাহুলের চোখেমুখে। সেই লোকটা একসময় ভারতকে স্তম্ভিত করে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন! বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার বিষণ্নতা তাকে গ্রাস করেছিল। অথচ দুই বছর অধিনায়ক থেকে ভারতকে তিনি অনেক সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। আধুনিক ক্রিকেটে ক্যাপ্টেনকে মাপা হয় ওয়ার্ল্ড কাপ দিয়ে।

বাংলাদেশ তার কোচ ক্যাপ্টেনকে হয়তো মাপবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাফল্য দিয়ে! তবে বাংলাদেশের লিগ পর্যায়ে আরও গোটা পাঁচেক ম্যাচ বাকি। দলের একাদশ আর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে হয়তো আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। তাতে ‘যদি লাইগা যায়’ ফর্মুলায় একটা দুটো ম্যাচ জিতলে আমরা বলব, বাংলাদেশ সফল!

বিশ্বকাপে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের কথা জানান দিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ কোচ-ক্যাপ্টেন। সেই স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থায়। সেখান উঠে দাঁড়াতে পারে কি না, সময় বলে দেবে। তবে সমর্থক, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছেন, তামিম থাকলে হয়তো দলের অবস্থা এতটা খারাপ হতো না! ক্রিকেট এক বলের খেলা। কোনো কিছুই জোর দিয়ে বলা যায় না। তবু মানুষ বলছেন। সেটা হয়তো আরও জোরালো হচ্ছে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের পারফরম্যান্সে। অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করা কঠিন। মাহমুদউল্লাহকে অবজ্ঞার জবাব তিনি দিচ্ছেন ব্যাটে। তামিমও হয়তো তেমন কিছু করতে পারতেন সুযোগ পেলে।

কিন্তু কোথায় তামিম! তিনি কি সত্যিই ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন! নাকি বিশ্বকাপ খেলতে না পারার শোকে মুহ্যমান এখনো! নাকি ক্রিকেট থেকে দূরে কোনো নির্জন দ্বীপের বাসিন্দা তিনি।

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে তামিম দেখছিলেন তার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, যার সঙ্গে টস করতে নেমেছিলেন সেই লোকটার ম্যাচ শেষে কী যন্ত্রণা! এবারের বিশ্বকাপে সেই লোকটাই ভারতীয় দলের কোচ। কিন্তু আবেগকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন!  রোহিত-কোহলিদের মতো তারকাদের সামলাচ্ছেন। অথচ ২০০৭-এ ব্যর্থ সেই ভার অধিনায়ক ২০১১-তে ঘরের মাঠে ভারতের কাপ জয়ের মুহূর্তেও মাঠে ছিলেন না! নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদে জয়পুরে আইপিএলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন সেই রাতে।

তামিম ইকবাল, বিশ্বকাপ শেষে নিউজিল্যান্ড আসবে বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে। টেস্টে নিশ্চয়ই আপনাকে চিন্তা করতে হবে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে। কিন্তু আপনি কেন ক্রিকেটীয় দ্বীপ থেকে দূরে? জাতীয় ক্রিকেট লিগ হচ্ছে। অথচ আপনি খেলছেন না! এই লিগে খেললে অনেককে জবাব দেওয়ার একটা মঞ্চ আপনি পেয়ে যেতেন। কিন্তু না খেলে কি সেই সুযোগটা হাত ছাড়া করছেন না? তামিমের মতো ক্রিকেট আইকনরা কেন ঘরোয়া ক্রিকেটকে অবজ্ঞা করবেন! নিজের ফর্ম, ফিটনেস পরখ করে নেওয়ার জন্য হলেও জাতীয় লিগ খেলা উচিত তামিমের। জাতীয় লিগ তো এখন আর সেই পিকনিক ক্রিকেট নেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কেন, সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে থেকে হুট করে টেস্ট খেলতে নামা ঠিক হবে কী? তা ছাড়া আপনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজেই কী অন্যদের বলার সুযোগ করে দিচ্ছেন, আপনি যথেষ্ট ফিট না! মানুষ কিন্তু বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দেওয়ার এখনো অনেক কিছু আছে আপনার। জাতীয় লিগ না খেলে নির্বাচকরাই বা আপনাকে টেস্ট টিমে ডাকবেন কীভাবে?