ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের স্বরূপ

শিল্পী নাজনীন প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৩, ১০:৫৩ এএম

প্রায় আট দশক ধরে চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত সম্প্রতি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সারা বিশ্ব আবার নড়েচড়ে বসেছে এই সংঘাতের ভয়াবহতায়। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের কথিত চরমপন্থী সংগঠন হামাস অতর্কিত রকেট হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের ওপর, যা বিশ্বকে হতবাক করেছে। মূলত ইসরায়েলের মতো আধুনিক ও উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হামাসের এই আক্রমণ ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ যেন ইসরায়েলের অত্যাধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতি এক খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ, সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে এক সতর্কবার্তা। নিপীড়িত, অত্যাচারিত ফিলিস্তিনিদের পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে, তারা নিজ দেশে উদ্বাস্তু হয়ে দিন কাটাচ্ছে বছরের পর বছর, পৃথিবীর বৃহত্তম কারাগারে পরিণত হয়েছে তাদের প্রিয় গাজা উপত্যকা, সুতরাং তাদের আর হারানোর কিছু নেই, তারা সর্বশক্তিতে নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত, এ যেন তারই বার্তা ইসরায়েল ও বিশ্ববিবেকের প্রতি।

গাজা উপত্যকা ২০০৭ সাল থেকে শাসন করে আসছে হামাস। কিন্তু ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি এই যোদ্ধাদের হামলা সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। হামাস ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে অনেক হামাস যোদ্ধা গাজার সীমানা অতিক্রম করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ইসরায়েলি বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন, শত শত মানুষকে হত্যা করেছেন এবং বহু সংখ্যক মানুষকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে গেছেন। এই হামলাকে গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের পরিচালিত এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড়, ভয়াবহ ও পরিকল্পিত আন্তঃসীমান্ত অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে। জবাবে গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা শহরের বিভিন্ন এলাকা ধুলায় মিশে গেছে। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত এক হাজার এবং গাজায় ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। ইসরায়েল সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের পাশাপাশি হামলা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

কিন্তু কেন এই সংঘাত? কেন এত সহিংসতা? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের পূর্ব ইতিহাস জানা অত্যাবশ্যক। ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রটির জন্ম মূলত বেলফোর ঘোষণা থেকে। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব আর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্য ও আন্দোলনকারীদের নেতা লিওনেল ওয়াল্টার রথশিল্ডকে সম্বোধন করে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিতে ‘ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য ফিলিস্তিনে আবাস প্রতিষ্ঠা’ এবং এর অর্জন সহজতর করার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়। চিঠিটি ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে পরিচিত।

কিন্তু এই ইউরোপীয় শক্তি ইহুদিবাদী আন্দোলনকে এমন একটি দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যেখানে ফিলিস্তিনি আরবরা ছিল সংখ্যায় ৯০ শতাংশের বেশি। ১৯২৩ সালে এই ইস্যুতে একটি ব্রিটিশ ম্যান্ডেট তৈরি করেছিল এবং ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সেটি স্থায়ী হয়েছিল। ইউরোপে তখন নাৎসিবাদের ব্যাপক প্রসারের কারণে নিপীড়িত, অত্যাচারিত ইহুদিরা প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল এবং সেই সময়ে ব্রিটিশরা ব্যাপকহারে ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসনকে সহায়তা করেছিল।

অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবেই ফিলিস্তিনিরা তাদের দেশে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। ১৯৩৬ সালে তারা আরব ন্যাশনাল লিগ গঠন করে। ফিলিস্তিনিরা ক্রমবর্ধমান ইহুদি বসতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করে এবং ইহুদিদের উৎপাদিত পণ্য বর্জনের ডাক দেয়। তবে ব্রিটিশ শক্তি সব উপায়ে ইহুদি বসতি স্থাপনাকারীদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। ইহুদিদের প্যারামিলিটারি বাহিনী গঠনেও সহায়তা করে ব্রিটেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ সাল নাগাদ তিন বছরে আরবদের সঙ্গে ইহুদি সশস্ত্র যোদ্ধাদের লড়াইয়ে অন্তত পাঁচ হাজার ফিলিস্তিনি মারা যায়। ১৫ থেকে ২০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত ও সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ বন্দী হয়। ১৯৪৭ সাল নাগাদ ইহুদিরা ফিলিস্তিনের ছয় শতাংশ দখল করে নেয়। তাদের মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ফিলিস্তিনের ৩৩ শতাংশে। তখনো ৬৭ শতাংশ আরব জনগোষ্ঠী ছিল দেশটির ৯৪ শতাংশ জমির মালিক। ভাগ্যবিড়ম্বিত ইহুদিরা রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়ে ব্রিটেনের সহায়তায় তথা পশ্চিমা শক্তির সক্রিয় ইন্ধনে নিজেদের উদ্বাস্তু জীবনের অবসান ঘটায় ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনিদের ঠেলে দেয় উদ্বাস্তু জীবনের দিকে। এ যেন নিজেদের ভাগ্যকেই হতভাগ্য ফিলিস্তিনিদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয় ইহুদিরা।

এই সংঘাতের একপিঠে আছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা, অন্য পিঠে আছে ইসরায়েলের নিরাপত্তার দাবি। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসার পরদিন থেকে ব্রিটিশ শাসনাধীন ফিলিস্তিনে যে যুদ্ধ শুরু হয়, তাতে সাড়ে সাত লাখের মতো আরব নিজেদের আবাস ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জর্ডান, লেবানন, সিরিয়ায় আশ্রয় নেন। অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বসবাস শুরু করেন। নিহত হন অন্তত ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি। ইহুদিরা দেশটির ৭৮ শতাংশ দখল করে নেয়। বাকি ২২ শতাংশ ছিল এর ভেতরেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন এলাকা। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল ওই সময় দাবি করেছিল, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই পাঁচটি আরব দেশ তাদের আক্রমণ করেছে এবং এই হামলার কারণেই এত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

১৯৪৯ সালে অস্ত্রবিরতির কারণে যুদ্ধ সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও এই সংঘাত মূলত পুরোপুরি আর থামেনি কখনো। ফিলিস্তিনিরা ১৯৪৮ সালের ১৫ মে যুদ্ধ শুরুর দিনটিকে প্রতিবছর ‘নাকাবা’ দিবস বা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করে। ইসায়েলের বসতির ফাঁকফোকরে এখনো যেসব আরব-ফিলিস্তিনি বসবাস করছে, তাদেরই বিভিন্ন আন্দোলনরত গোষ্ঠী এখনো লড়াই করে চলেছে। ইসরায়েলের জনসংখ্যার তুলনায় ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা এখন প্রায় ২০ শতাংশের মতো।

ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ ও সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে মূলত ৪টি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান, ইসরায়েলি বসতি, জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্বাস্তু সমস্যা। প্রায় এক শতাব্দী ধরে চলমান বিরোধ ও সংঘাতের মূল ইস্যু মূলত এই ৪টি। এগুলোর মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বলতে ইসরায়েলের পাশাপাশি পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনকে বোঝানো হয়। তবে হামাস এই দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার শপথে অটল আছে। আর ইসরায়েল বলেছে, একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে অবশ্যই নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে, যাতে ইসরায়েলের জন্য তারা কোনো ধরনের হুমকি হয়ে দেখা না দেয়।

ইসরায়েলি বসতি ইস্যুতে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখলকৃত ভূমিতে নির্মিত ইহুদি বসতিগুলোকে অবৈধ বলে মনে করে। তবে ইসরায়েলের দাবি, এই ভূমিতে তাদের অধিকার ঐতিহাসিক এবং বাইবেলেও এর সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। তাদের অব্যাহত সম্প্রসারণ ফিলিস্তিনের সঙ্গেই শুধু নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি।

জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণও এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ইস্যু। আল আকসা মসজিদসহ মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নিয়ে পূর্ব জেরুজালেমের দখল নিতে চায় ফিলিস্তিন। তারা এখানে নিজেদের রাষ্ট্রের রাজধানী স্থাপন করতে চায়। তবে ইসরায়েলের কথা হলো, জেরুজালেম তাদের ‘অবিভাজ্য ও চিরন্তন’ রাজধানী হিসেবে থাকবে। পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পায়নি। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কিত এই শহরে ইসরায়েলের এখতিয়ারের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করেই তাদের দাবিতে সমর্থন দেন এবং ২০১৮ সালে সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করেন।

সবশেষ উদ্বাস্তু সমস্যা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের অন্যতম প্রধান একটি ইস্যু হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৬ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী বা উদ্বাস্তু হিসেবে জীবনযাপন করছেন। ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বাস্তুহারা  হয়ে তারা গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়ায় বসবাস করছে। নিবন্ধিত শরণার্থীদের প্রায় অর্ধেক বসবাস করছে ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরগুলোতে। ফিলিস্তিনি নেতারা বহু বছর ধরে দাবি করে আসছেন, এই শরণার্থীদের নিজের মাটিতে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হোক। তবে ইসরায়েলের উত্তর হলো, ফিলিস্তিনিদের যে কোনো স্থাপনা করতে হবে ইসরায়েলের সীমানার বাইরে।

বিদ্যমান এসব ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট কোনো সমাধানের পথ পাওয়া তো দূরের কথা, দিন দিন বরং ঘনীভূত হচ্ছে আরও। ইসরায়েল তার দখলদারত্ব ক্রমাগত বাড়াতে বাড়াতে ফিলিস্তিনিদের এতটাই কোণঠাসা করে ফেলেছে যে তাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে, নিজের দেশেই তারা হয়ে পড়েছে উদ্বাস্তু, আর তাদের আবাসভূমি তাদের কাছে এখন ‘পৃথিবীর বৃহত্তম কারাগার’ হয়ে উঠেছে। যে অস্ত্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সেই একই অস্ত্র কেন নিরীহ ফিলিস্তিনিদের জন্য হুমকি নয়, কেন ইসরায়েল ক্রমাগত ফিলিস্তিনের দোহাই দিয়ে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে, তার উত্তর কারও কাছে নেই। ইসরায়েল নিজেই যে ফিলিস্তিনের জন্য তথা বিশ্বশান্তির জন্য এক বড় হুমকি সে সত্যিটা তার চোখে আঙুল দিয়ে কেউ দেখায় না, কারণ পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলের পাশে সব সময় আছে। তারা বলছে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। প্রশ্ন হলো, তাহলে আত্মরক্ষার অধিকার কি নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নেই? কেন তারা শান্তিপূর্ণ জীবন ছেড়ে আজ এই রক্তসরোবারে স্নান করছে? বিশ্ববিবেক এই প্রশ্নে নীরব। পৃথিবী যে ‘শক্তের ভক্ত আর নরমের যম’, সে প্রবাদটি সত্যি প্রমাণ করতে তারা যেন বদ্ধপরিকর।  

কিন্তু সংঘাত কারোই কাম্য নয়, সংঘাত কখনো শান্তি আনে না। চলমান সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে নিরীহ ফিলিস্তিনি আর ইসরায়েলি জনগণ। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উভয় পক্ষই। সংঘাত যত বাড়বে এই ক্ষতির পরিমাণও ততই বাড়বে। তাই সংঘাত পরিহার করে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে যত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা যাবে, ততই ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি জনগণের জন্য এবং বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গলজনক হবে। এজন্য দরকার আন্তর্জাতিক মহলের আন্তরিক উদ্যোগ, সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের একচোখা নীতি থেকে সরে এসে ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন। নইলে সংঘাত কেবলই দীর্ঘতর হবে, সুদূরে মিলাবে শান্তির পথ।

লেখক : কথাশিল্পী ও শিক্ষক