রেকর্ড ক্যারি করতেই সাকিব এক্সপ্রেস

অঘোর মন্ডল প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩, ০৩:২৩ পিএম

‍‍`আ কিং ইজ অলওয়েজ কিং!‍‍` কিন্তু রাজার এই রাজত্ব পুরোটা মাঠে। বাইশগজে। বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় পরিসরে সত্যি-ই সাকিব আল হাসান রাজা! সেটা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি যে কোনো ফরম্যাটেই মাঠে নামলেই কিছু না কিছু জয় করছেন তিনি! কখনো দেশের হয়ে রেকর্ড গড়ছেন। কখনো সেটা বিশ্বরেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নিলেন। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট। এবার আইরিশদের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পথে আবার রেকর্ড। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক তিনি। তার নামের পাশে  ১৩৬ উইকেট। পেছনে ফেললেন নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদিকে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার দেশের হয়ে যিনি দুই হাজার রান আর একশ উইকেট নিয়েছেন।

 
সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এটা মেনে নিতে অনেকে একসময় আপত্তি করতেন। তাদের যুক্তি ছিল, বাংলাদেশ তো জিম্বাবুয়ের মত দুর্বল দলের বিপক্ষে বেশি ম্যাচ খেলে। সাকিবের পারফরম্যান্স তো সেই সব দলের বিপক্ষে! দুর্বল এই যুক্তিকে বাংলাদেশ দলের এই বাঁহাতি বাউন্ডারি ওপারে পাঠিয়েছেন বহুবার। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান--সবার বিপক্ষেই তিনি পারফর্ম করেছেন। তাই সেই যুক্তিগুলো এখন অচল।কিন্তু সচল সাকিবের এক্সপ্রেস ক্যারিয়ার। এক এক ষ্টেশন থেকে একের পর এক ‍‍`রেকর্ড ‍‍` তুলে নিয়ে ছুটছে!


মাঠে অধিনায়ক সাকিবও এখন অনেক পরিণত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ বলুন কিংবা আইরিশদের বিপক্ষে এই সিরিজ বলুন। তার অধিনায়কত্ব দেখে মনে হয় সিংহাসনচ্যুত সম্রাটের প্রত্যাবর্তন! আগের চেয়ে একটু বেশি সংহত! সংযত! অচঞ্চল! আবার চোখের ইশারায়, হাতের ইশারায় টিমমেটদের দিচ্ছেন বরাভয়! আমি আচ্ছি।
 

একই সঙ্গে এই অধিনায়ক সাকিবকে মনে হয় অনেক বেশি কতৃর্ত্ববাদী! দলের উপর টিম ম্যানেজমেন্টের অন্যদের চেয়ে তার প্রভাব বেশি। হাথুরুসিংহে দায়িত্ব নেওয়ার পরও সাকিবের শারীরিক ভাষা বুঝিয়ে দেয় দল পরিচালনার দায়িত্ব অধিনায়কের। মাঠের মাঝখানের ২২ গজ যুদ্ধক্ষেত্র। সেখানে যুদ্ধের নেতৃত্ব তাকেই দিতে হয়। টিম মেটদের যোদ্ধা মন আর স্নায়ু তাকেই বুঝতে হয়। যোদ্ধা মন আর স্নায়ুকে শাসন করার কৌশলও আয়ত্ত করেছেন। বা করতে হয়েছে। নিয়েছেন খানিকটা অচঞ্চল থাকার পাঠ। আয়ত্ত করেছেন কিছুটা পরিমিতিবোধও।
 

লিটন ও রনি তালুকদার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও দারুণ শুরু করার পর ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নামলেন অধিনায়ক নিজে। অপরাজিত থাকলেন ৩৮ রানে। বাংলাদেশও পেলে ১৭ ওভারে  ২০২ রানের বড় স্কোর। তারপর বল হাতে তিনি তুলে নিলেন ২২ রানে আইরিশদের ৫ উইকেট। লিটনের ৮৩ রানের ঝড়ো ইনিংস। সঙ্গে উইকেটের পেছনে অসাধারণ ৩ ক্যাচ!  চোখে তৃপ্তি দেয়া টাটকা সেই স্মৃতিও ঝাপসা হয়ে গেলো সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের ঝলকে! ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কারও চলে গেলো বাংলাদেশ অধিনায়কের হাতে পারফর্ম্যান্সের গরিমা বিছিয়ে থাকা পথে পুরস্কারের চেক হাতে নিয়ে যখন হাঁটলেন প্যাভিলিয়নের দিকে, কোচ হাথুরুসিংহেও ছুটে এসে পিঠ চাপড়ালেন তার। লোকটা শুধু মৃদু হাসলেন!


মাঠে সাকিবোচিত পারফর্মান্স। মাঠের বাইরের  যাপিত সাকিবে কিন্তু কোন পরিবর্তন হয়নি। বির্তক-টিতর্ক সঙ্গী করে তিনি তার মতোই আছেন! অবিশ্বাস্য লাগে এতো কিছু সামাল দিয়ে একটা লোক এভাবে পারফর্ম করেন কিভাবে! হালফিলের বিতর্কিত দুবাইয়ে সোনার দোকান উদ্বোধন। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার ছাড়পত্র তিনি পাবেন কি না বিসিবি থেকে, সেটা নিয়ে ভাবনা। এতো কিছু মাথায় নিয়ে পারফর্ম করা খুব সহজ কাজ কি!
 

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে হয়, বিশ্বের একটা নিজস্ব নিয়ম আছে। সে নিয়মেই মানুষ নড়াচড়া করে। আর সেই আলোড়ন ব্যক্তি বিশেষকে ঠিক সময়ে ভাসিয়ে তোলে। জাগিয়ে তোলে তার ভেতরের সত্তাকে। যে নিজেকে বলতে পারেন, পেশাদার ক্রীড়াবিদের আসল প্রেম হচ্ছে তার খেলা। বাকি সব মায়া। অন্যরা তা দেখে আপনার সমালোচনা করতে পারেন। তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ যতদিন আপনি পারফর্ম করতে পারবেন ততোদিন আপনি ‍‍`রাজা‍‍`।
সাকিব নিজের ক্রিকেট রাজ্যকে প্রতিদিন বাড়িয়ে চলেছেন! অবসরের পরও তার সেই রাজ্যকে অন্য কারো পক্ষে অতিক্রম করা সহজ হবে না।

 

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট