`ফায়ার অফ ব্যাবিলন` ফিল্মটা দেখেছেন? ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী বাংলাদেশ দলের এক টেস্ট ক্রিকেটারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। সমস্ত কৌতুহলে পানি ঢেলে দিয়ে বললেন – না! সত্য উচ্চারণের সাহসকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। তারপর মনে মনে ভাবলাম, দেখেননি! তাতে ভালোই হলো। দেখলে তরুণ এই ক্রিকেটারের মনে হতে পারতো ক্যারিবীয়ন ক্রিকেটের কোন পৌরাণিক কাহিনী!
কারণ, ঐ ক্রিকেটারের জন্মেরও আগে অবসরে চলে যাওয়া চার ফাস্ট বোলারের নৃশংস-বন্য আগ্রসন ভরা রক্তঝরানো বোলিং ফায়ারকে তুলে ধরা হয়েছে ঐ ফিল্মে। কিন্তু জোয়েল গার্নার-অ্যান্ডি রবাটর্স-মাইকেল হোল্ডিং- মার্শালদের বোলিংয়ের সামনে বিশ্বের অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যান ঠকঠক করে কাঁপতেন! এই চার ফাস্ট বোলারের আগুন ঝরা বোলিং ক্রিকেট ইতিহাসের ভয়াবহ পেস অ্যাটাকের ভয়ঙ্কর সুন্দর উদাহরণ হয়ে আছে এখনও। সঙ্গে আরেকটা নাম, যিনি চুইংগাম চিবুতে চিবুতে মাঠে নামতেন বিশ্বের সব বাকি ফাস্ট বোলারদের ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে ফেলার জন্য। ভদ্রলোকের নাম স্যার আইজ্যাক ভিভিয়ান রিচার্ডস। যার নামে অ্যান্টিগায় রাস্তা আছে। যার নামে একটা ক্রিকেট স্টেডিয়াম আছে। যেখানে বাংলাদেশ এই সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলবে।
কিন্তু এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে ‘ফায়ার অফ ব্যাবিলয়ন’ ফিল্মের উইন্ডিজকে মেলাতে গেলে ভুল হবে। মস্ত বড় ভুল! এই মুহুর্তে নয়, বেশ কয়েক বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম বিপন্ন এক দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যাদের ফাস্ট বোলিং ইতিহাসের পাতায়। ভিভ রিচার্ডস জাদুঘরে। ওয়ালশ-অ্যাম্ব্রোস-ব্রায়ান লারারা রেকর্ড বইতে। এবার আবার তাদের দলের নিয়মিত অধিনায়ক জেসন হোল্ডারকে ইনজুরি ছিটকে দিয়েছে সিরিজের বাইরে! তেমন একটা দলের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ।
ক্যারিবীয় ক্রিকেটে ক্যালিপসো মিউজিক খুঁজে পাওয়া যায় না। ফায়ার অফ ব্যাবিলয়নের সেই ফায়ারটা নিভে গেছে। এসব শোনার পর মনে হতে পারে; এদের উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জেতার কাজ তেমন কঠিন কিছু নয় বাংলাদেশের জন্য! ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে দেশের আমজনতার এই প্রত্যাশা। দলের উপর বাড়তি চাপ তৈরির জন্য এটাই যথেষ্ট। ঘটনাক্রমে চাপটা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, তিনি সাকিব আল হাসান। জীবনের প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব করেছেন ২০০৯ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেবার সিরিজ জিতেছিলেন। তাঁর অতীতের ক্যানভাস জুড়ে অনেক সুখচ্ছবি! প্রত্যাশাও তাই তাঁর কাছে অনেক বেশি।
সব মিলিয়ে সাকিবকে এই সিরিজে দুটো উইকেট সামলাতে হবে নিজেকে। প্রথমটা নিজের। দ্বিতীয়টা দেশের কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশা। অন্যদের ব্যথর্তা খুব বড় হয়ে চোখে পড়বে না। কারণ, তারা কেউ সাকিব আল হাসানের মত ব্র্যান্ডভ্যালু ক্যারি করেন না! কথাটা অনেকের কাছে ভাল নাও লাগতে পারে। কিন্তু ওটাই সত্য। তাই সাকিব ব্যর্থ হলেই `গেলো গেলো` রব উঠতে সময় লাগবে না। বলা হবে ‘ও তো টেস্ট খেলতে চায় না!’ তারপর উপর তিনি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেননি। ছুটি নিয়ে পরিবারের সাথে সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু আমরা ভুলে যাই সাকিবরা জানেন কীভাবে ফিরে আসতে হয়। অতীতে তিনি সেটা প্রমাণ করেছেন। আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে যেটা মনে হয়অসম্ভব! সাকিবের মত পারফরমাররা জানেন সেই অসম্ভবকে কীভাবে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে সম্ভবের জয়গান শুনিয়ে ফিরে আসতে হয়। তারপরও লিখছি, ‘নিজের উইকেট আর দর্শকদের প্রত্যাশা দুটো উইকেট আপনাকে আগলে রাখতে হবে সাকিব।’
তবে তিন ফরম্যাটে খেলতে হলে `ক্লান্তি` নামক শব্দ সাকিবের দুয়ারে এসে দাঁড়াতেই পারে। তখন যদি তিনি বিশ্রাম চান, তাহলে তাকে দোষ দেয়া যাবে কি! মধ্য ত্রিশকে পেছনে ফেলে ছুঁটে চলা এক ক্রিকেটারের শরীর সবসময় সায় দেবে সেটা ভাবা ঠিক না। তবে সাকিব পেশাদারা ক্রীড়াবিদ। কখন বিশ্রাম নিতে হবে, কখন জান বাজি রেখে লড়তে হবে, সেটা তাকে শিখিয়ে দেয়ার কিছু নেই। সব কথার শেষ কথা হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিবকে এখনো খুব প্রয়োজন। কারণ, প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার মত ক্রিকেটার এই দলে আর ক`জনই বা আছেন!
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক