আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, আমাদের নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার সবটুকু ধারণা মাথায় নিয়ে তাদের অগ্রগামী চলা উৎফুল্ল করে তুলবে।
স্বাধীনতা বাঙালির জীবনে এক অসাধারণ ঘটনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করেছে এ জাতি। উপমহাদেশের মানচিত্র বদলে দিয়েছে, একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে। এই ধারণা আমাদের বাঙালির জীবনকে একটি বিশাল জায়গায় নিয়ে গেছে। এই জায়গা আন্তর্জাতিক বিশ্বে আমাদের একটি অন্য রকম উপাদান দিয়েছে।
আমরা যখন এ প্রজন্মের দিকে তাকাই, তখন দেখতে পাই, আমাদের প্রজন্ম ঠিকমতো বিষয়টি ধারণ করছে না। স্বাধীনতা কথাটি তাদের ভাবনায় আছে, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তারা চেতনার জায়গাগুলোতে অন্য রকমভাবে নিয়ে গেছে। কেন নিয়ে যায়? এই চিন্তা আমাদের মাঝে খুব আসে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দেখতে চায় না। তারা অন্য চলচ্চিত্র দেখতে হল ভর্তি করে। মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হলে সেই হল প্রায় খালি হয়ে থাকে। তারা মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ে না, যে চেতনাকে ধারণ করলে বিশ্বজুড়ে তার গর্বের জায়গা হবে, গর্বের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে বলবে, “আমি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাঙালি জাতির নাগরিক।” তবে দুঃখের বিষয়, এই কথাগুলো আমাদের এই প্রজন্মের মধ্যে ঠিকমতো দেখতে পাই না। ওরা ঠিকমতো বাংলাটাও বলে না। কিন্তু কেন বলে না? এটা আমাদের একটি জিজ্ঞাসা। তারা কেন স্বাধীনতার চেতনাকে নিয়ে নিজেদের ধারণাকে উজ্জীবিত করবে না?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে স্বাধীনতার সবটুকু অবদান দিয়ে এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সবটুকু জায়গা ধারণ করে নিজেদের প্রজন্মকে উদ্দীপিত করবে। এই উদ্দীপনার মাঝে যদি আমাদের প্রজন্ম ঠিকমতো এগিয়ে না যায়, তবে বাংলাদেশের জন্মের নানা প্রতিরোধের জায়গা তৈরি হয়ে যাবে।
আমরা মনে করি, আমাদের প্রজন্ম এগিয়ে আসবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। তার মাঝে সঞ্চারিত হবে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই অসাধারণ ভাষণ। সেই ভাষণকে ইউনেসকো ঐতিহাসিক প্রামাণিক দলিলে সংরক্ষণ করেছে। এই সবকিছু নিয়ে আমাদের প্রজন্ম আলোকিত হবে। নিজেদের মনের দরজা খুলে দেবে এবং বলবে আমরা তো সেই মানুষ, যে মানুষের কাছে আজকের দিনটি বিশ্বের মানুষের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
আমরাও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের দরবারে যাব। যে যেখানে থাকি, সেই জায়গাটা আলোকিত করে রাখব। এমনই হোক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের প্রজন্মের গড়ে ওঠা। তারা যদি বুঝতে না পারে, তাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলার যদি জায়গা সৃষ্টি করা হয়, তাদের আলোকিত করার জন্য অন্যদের ডাকা হয়, তাহলেই এই জায়গাগুলো তৈরি হবে। আমাদের স্বাধীনতা হোক এই রূপরেখার আশ্চর্য দিগন্তবিথারী দর্শন। আর এই দর্শনের আলোকে আলোকিত হোক আমাদের প্রজন্ম। ভরে উঠুক বাংলাদেশের সবটুকু স্বপ্নিল সাধনা। এই সাধনার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
লেখক: সভাপতি, বাংলা একাডেমি