ইউক্রেনের সামনে এখন দুটো পথ খোলা। প্রথমত, ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে যত দ্রুত সম্ভব রাশিয়ার সঙ্গে একটা আপস করা, যেন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হয়, রাশিয়া যেন তার সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়। যেসব অঞ্চল রুশ সৈন্যরা দখল করে রেখেছে, তা মুক্ত করে দেয়। এবং যদি সম্ভব হয় তবে অধিকতর কার্যকর স্বায়ত্তশাসন বলবৎ করার প্রতিশ্রুতিতে ডনবাস অঞ্চলকে নিজ সীমানাভুক্ত করতে পারে, এবং দীর্ঘমেয়াদি লিজ দেওয়ার বিনিময়ে ক্রিমিয়াকেও নিজ সীমানাভুক্ত করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার সঙ্গে কোনোরূপ আপস না করে নিয়মিত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। ক্রিমিয়া, ডনবাস বা অন্যান্য অঞ্চল কিংবা সমগ্র ইউক্রেন রাশিয়ার দখলে চলে গেলেও, নতি স্বীকার না করে তা পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যত দ্রুত ও যত ব্যাপকভাবে সম্ভব, তত দ্রুত ও ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক জোট গঠন করা। নিজের অবস্থান সংহত করতে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো।
আপস না লড়াই–এই প্রশ্নে একসময় খুব সহজে লড়াইয়ের কথা বলা হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেটাই সবচেয়ে কঠিন। আর তা আরও কঠিন যখন ইউক্রেনের প্রতিপক্ষ রাশিয়া। যুদ্ধ চালনার উপায় বিবেচনায় ইউক্রেন যে রাশিয়ার তুলনায় অসম অবস্থানে আছে, তা বলা বাহুল্য। তবে যুদ্ধ, আগ্রাসন বা দখলের জয়-পরাজয় সব সময় সংখ্যা সমীকরণ দিয়ে হয় না। আমাদের অতীতে যাওয়ার দরকার নেই, খোদ আফগানিস্তান এমন এক উদাহরণ, যেখান হতে এখনকার যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সম্মিলিতভাবে এবং একদা পরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়ন একই তিক্ততা নিয়ে ফিরেছে।
এক দেশ বা অঞ্চলের অভিজ্ঞতা বা ইতিহাস অন্য একটি দেশ বা অঞ্চলের ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে, তবে তা অন্যত্র সত্য না-ও হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় গোটা পশ্চিমা শক্তি আফগানদের সঙ্গে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। আবার সেই গোটা পশ্চিমা শক্তি আফগানদের কাছে অসহায় হয়ে একসময় নিজেরা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর নৈতিক সমর্থন দৃশ্যত ইউক্রেনের পক্ষে। কিন্তু ইউক্রেনীয়দের নৈতিক জোরের কোনো কমতি নেই। কমতি যা তা পূরণে পশ্চিমারা এখনো তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখায়নি।
রাশিয়ার সামনেও করণীয় দুটো। প্রথমত, ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে ন্যাটোর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধ বন্ধ করা, যেখানে অঙ্গীকার থাকবে—ন্যাটো ইউক্রেনের মাটি থেকে সামরিক স্থাপনা সরিয়ে নেবে এবং ভবিষ্যতে তা পুনর্নির্মাণ করবে না। অধিকতর ও কার্যকর স্বায়ত্তশাসনের বিনিময়ে ডনবাস অঞ্চলকে ইউক্রেনের সীমানাভুক্ত করতে সহায়তা করা। দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চিত লিজের বিনিময়ে ক্রিমিয়া অঞ্চলও ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেওয়া।
দ্বিতীয়ত, সামরিক ক্ষয়ক্ষতি, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি ও বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভাবমূর্তি জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও ইউক্রেনকে যুদ্ধে পদানত করা। ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণ করানো এবং কঠোর শর্ত ও চুক্তির মাধ্যমে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ জন্য প্রয়োজনে ইউক্রেনে বশংবদ সরকারও গঠন করতে হবে রাশিয়াকে। ন্যাটো ও পশ্চিমা দেশগুলোকে নিরস্ত করতে প্রয়োজনে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ঝুলিয়ে রাখতে পারে তারা।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা বর্তমানে বেলারুশে আলোচনায় বসেছেন। এই আলোচনা চলমান থাকবে বলে উভয় পক্ষ জানিয়েছে। কিন্তু যখন রুশ সৈন্য ইউক্রেনের মাটিতে উপস্থিত, এবং যখন আলোচনা বেলারুশের মাটিতে হচ্ছে, তখন তা ইউক্রেনকে মোটেই সমান মর্যাদায় সমঝোতা করতে সহায়তা করবে না।
দুর্ভাগ্যজনক যে ইউরোপীয় কোনো দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে এগিয়ে আসেনি। এই ক্ষেত্রে সুইডেন বা ফিনল্যান্ড মধ্যস্থতার জন্য এগিয়ে আসতে পারত। কেননা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হলেও এই দুটি দেশ কখনো ন্যাটোর সদস্য হয়নি।
প্রকৃতপক্ষে সুইডেন বা ফিনল্যান্ড ইউক্রেনের জন্য একটা অনুকরণীয় মডেল হতে পারত। ষাটের দশক থেকে ন্যাটো ও ওয়ারশ জোটের মধ্যে কৌশলগত টানাপোড়েন ও স্নায়ুযুদ্ধ চলার সময় সুইডেন ও ফিনল্যান্ড পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক মডেল অনুসরণ করলেও, কখনো সোভিয়েত ইউনিয়ন, কম্যুনিস্ট ইউরোপ বা ওয়ারশ জোটভুক্ত দেশসমূহের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য হয়নি। সুইজারল্যান্ডও কোনো সামরিক জোটের সদস্য না। যে জন্য এখনো সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষ দেশের মর্যাদা পাচ্ছে।
ইউক্রেন তো স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ। সুতরাং স্বাধীন দেশ হয়েও কেন রাশিয়ার মতো বড় প্রতিবেশীর মন জুগিয়ে চলতে হবে? কেন ইউক্রেন ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে পারবে না? এর উত্তর বহুমুখী। প্রথমত, আদর্শিক বিবেচনায় স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ সাধারণভাবে, স্বাধীনভাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে আমরা কোনো আদর্শিক বিশ্বে বসবাস করি না। দ্বিতীয়ত, বুঝতে হবে যে বিশ্বপরিবারের সদস্য হিসেবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কখনো শর্তহীন না। একটা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব তত বেশি সুরক্ষিত, যত বেশি তা অপর দেশ ও দেশসমূহের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সমীহ দেখায়। তৃতীয়ত, আদর্শিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রায়োগিক বা প্র্যাগম্যাটিক চিন্তাভাবনাকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত এবং কখনো কখনো প্র্যাগম্যাটিক ভাবনাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। চতুর্থত, ইউক্রেনকে নিজস্ব ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। এবং স্বীকার করতে হবে যে স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে ইউক্রেনের অস্তিত্ব ১৯১৭ সালে রাশিয়ার কমিউনিস্ট নেতৃত্বের সমর্থনে রচিত হয়েছে, এবং সোভিয়েত ইউক্রেন ১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল। এই সোভিয়েতের পতনের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম ইউক্রেনের জন্ম। ইউক্রেনের জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ রুশ জাতি। অনেক নাগরিকদের ইউক্রেন এবং রুশ, দুই পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব আছে। অর্থাৎ আদর্শিক বিবেচনায় ইউক্রেন স্বাধীন ও সার্বভৌম হওয়ায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা এর যেমন আছে, তেমন প্রায়োগিক বা বাস্তবতা বিবেচনাকেও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর অভিযোগে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন না। ২০১৪ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ। তবে এবারে এই নিষেধাজ্ঞার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। ফলে তা রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর এবারে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোতে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বিশেষ করে মার্কিন ডলার অকার্যকর হয়ে পড়বে। ফলে রুশ মুদ্রা রুবলের মূল্যমানে ধস নামবে। রাশিয়ার রপ্তানি কমবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যাহত হবে। ভিসা বা মাস্টারকার্ড কাজ করবে না।
কিন্তু ইউরোপে ব্যবহৃত গ্যাসের চল্লিশ ভাগ যায় রাশিয়া থেকে। ইউরোপের পক্ষে এই মুহূর্তে এর বিকল্প উৎস বের করা সম্ভব হবে না। সে জন্য আমার ধারণা, ইউরোপ গ্যাস আমদানি অক্ষত রাখবে, এবং রাশিয়াকে গ্যাসের দামও নিয়মিত পরিশোধ করবে। অপর দিকে রাশিয়া ইউরোপের বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করবে। গ্যাস সরবরাহের জন্য চীনের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে, রাশিয়া চাইবে দ্রুত তা কার্যকর করতে। চীন প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে সতর্ক হলেও, ক্রমান্বয়ে কোনো একটা পথ বের করে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে। মার্কিন ডলারের বদলে ভিন্ন পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা করা চীনের অনেক দিনের ইচ্ছা। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা চীন-রাশিয়াকে উল্টো সে পথে ঠেলে দিতে পারে। এতে করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা চূড়ান্তভাব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে তা এক দিনে হবে না। এ জন্য নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকার মতো সহনশীল অর্থনীতি জরুরি।
রাশিয়া ও ইউক্রেন একসময় একই দেশের অংশ হওয়ায়, তারা দুই জাতি হলেও, বৃহত্তর বিবেচনায় একই ভূখণ্ডের সদস্য হওয়ায়, সীমান্তের দুই পাশে একই পরিবারের আত্মীয়স্বজন থাকায় রুশ নাগরিকরা সাধারণভাবে ইউক্রেনীয়দের ভ্রাতৃসুলভ মনে করে। সে জন্য অনেক রুশ নাগরিক ইউক্রেন আক্রমণকে ভালো চোখে দেখেনি। অপর দিকে রাশিয়ার শহুরে তরুণ প্রজন্ম পশ্চিমা জীবনরীতিতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এখন নিষেধাজ্ঞার কারণে সমস্যায় পড়বে। স্বভাবতই তাদের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হবে ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে। সুতরাং রুশ নাগরিকদের অনেকে পুতিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করতে পারে।
অলিম্পিক এবং ফিফায় এরই মধ্যে রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। রাশিয়াকে আরও বহুমুখী সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সমালোচিত হবে। রাশিয়াকে নিন্দা করে প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হতে পারে কেউ কেউ। সম্মুখযুদ্ধ বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলেও আমরা এখন এক নতুন ও প্রবল স্নায়ুযুদ্ধ দেখতে পাব।
এই ধরনের যুদ্ধ কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। যুদ্ধের দুই পক্ষ যদি কেবল রাশিয়া ও ইউক্রেন না হয়, বরং রাশিয়া এবং পশ্চিম হয়, তবে এই বিশ্বমাত্রার যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যুদ্ধকালীন শুভবুদ্ধির মৃত্যু হয়। ফলে কারও পক্ষেই ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব না। পশ্চিমের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে কোণঠাসা হলে রাশিয়া এমনকি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের চিন্তা করতে পারে বা ক্ষেপণাস্ত্রের ভয় দেখাতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে পড়বে ইউরোপ। ইউক্রেন আত্মসমর্পণে আগ্রহী না হলে রাশিয়া অধিকতর মাত্রায় ধ্বংসাত্মক হতে পারে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রুশ বিনিয়োগ রয়েছে। রাশিয়াতেও প্রচুর ইউরোপীয় বিনিয়োগ রয়েছে। এসব বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশকেও এই যুদ্ধের জন্য মূল্য দিতে হবে। রাশিয়া ও ইউক্রেন–দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমুখী। রূপপুর পারমাণবিক জ্বালানি কেন্দ্রে রুশদের পাশাপাশি প্রচুর ইউক্রেনীয় কাজ করছে। এখানে রুশ ঋণসহায়তা আছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ঋণসহায়তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে। ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে প্রচুর কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য বাংলাদেশে আসে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারে এই পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যাবে। ইউক্রেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য অনেকে এমন শহরে আছেন, যেখানে কঠিন যুদ্ধ চলছে। কোনো যানবাহন নেই সীমান্তে আসার। তারা অনিশ্চয়তায় আছেন।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে ইউরোপে শরণার্থী ঢুকবে। এদের সংখ্যা এক কোটি ছাড়াতে পারে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তখন এই শরণার্থীদের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বে। অর্থ জোগান দেবে। আমার ভয়, সে রকম পরিস্থিতিতে দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশে থাকা মিয়ানমার শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কমিয়ে তা ইউক্রেনের শরণার্থীদের পেছনে ব্যয় করবে।
ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের সহানুভূতি রয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আশা করেছিলেন পশ্চিমারা তাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাশিয়াকে পরাহত করবে। রাজনীতিকদের মুখের কথা আর কাজের মধ্যে যে ফাঁক থাকে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যে ভিন্ন ভাষা ব্যবহার করা হয়, ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কি তা এখনো শেখেননি। পশ্চিমাদের আপাত নিষ্ক্রিয়তা তাঁকে হতাশ করেছে। পশ্চিমারা বাগাড়ম্বরে কার্পণ্য করেনি। কিন্তু জেলেনস্কির হয়তো শেখা শেষ হয়নি। দেশ চালনার সঙ্গে তাই মাঝেমধ্যেই যেন তাঁর পুরোনো পেশার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যুদ্ধের এই ক্রান্তিকালে তিনি কিনা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করে বসলেন!
কূটনীতিতে এই লঘু আবেগের কোনো স্থান নেই। কেবল রাশিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ক্রেডেনশিয়াল নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ কেনা যাবে না। রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনিয়ানদের রক্ত ঝরতে পারে, কিন্ত তাতে পশ্চিমাদের চোখের পানি পর্যন্ত ঝরবে বলে মনে হয় না। ইউক্রেন বস্তুতই অসহায়। পশ্চিম হয়তো রাশিয়াকে বশে আনতে পারবে। কিন্তু এতে ইউক্রেনের প্রাপ্তি কী হবে, তা বোধগম্য নয়। রাশিয়া ও ইউক্রেন আলোচনার টেবিলে বসেছে, এই আলোচনাতেই ইউক্রেনের কিছু প্রাপ্তি যোগ হতে পারে। আলোচনা ছেড়ে যুদ্ধের মাঠে চলে গেলে, সেখানে প্রাপ্তির জন্য কতটুকু দাম দিতে হবে, তা কেউ জানে না।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব