অমিক্রন যদি ছড়িয়ে পড়ে তবে প্রতিকার কী?

নাজিয়া আফরীন প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২২, ০৬:০১ পিএম

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন। আমাদের দেশেও দ্রুতই ছড়াচ্ছে অমিক্রন। ধারণা করা হচ্ছে আগামী ২/৩ সপ্তাহের মধ্যেই সংক্রমণ বাড়বে, এর কারণ বুঝতে অবশ্য কারো বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়ানোর সময় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি এবং জনসাধারণের নিজ উদ্যোগে সচতেনতার যে চিত্র আমরা দেখেছি, তাতেই বোঝা যাচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে অনেকটা কম সহিংস অমিক্রনও সুযোগ পেলে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে।

ডেল্টার চেয়ে মৃত্যুর হার কম হলেও এটি সংক্রমণের দিক থেকে করোনাভাইরাসের আগের যে কোনো ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনকে ছাড়িয়ে গেছে। ভারতসহ অনেক দেশে হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১২৮টি দেশে অমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড এরইমধ্যে ভেঙে গেছে। রোগীর অত্যধিক চাপে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, আগের ধরনগুলোর মতো অমিক্রনের কারণে মানুষ অনেক বেশি অসুস্থ হয় না। অমিক্রনের উপসর্গ সাধারণ সর্দি কাশির মতোই। আর শীতকালের এসময়টায় সাধারণ ঠাণ্ডাকাশি জ্বরে অনেক মানুষ ভোগে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আল আমিন সেতু জানালেন, এখন হাসপাতালে রোগী আসেন গলা শুকিয়ে যাওয়া, সর্দি লাগা, মাথা ব্যথা, জয়েন্টে ও গলায় ব্যথা আর শারীরিক অবসাদ নিয়ে। অমিক্রনের লক্ষণ সাধারণ ঠান্ডার মতোই। তাদের অধিকাংশেরই করোনা টেস্ট করলে পজিটিভ হয়ে যাচ্ছে। আর এটা অমিক্রন কিনা তা সিকোয়েন্সিং করেই জানা সম্ভব। যেভাবে অমিক্রন ছড়াচ্ছে, তাতে আর বেশি দিন সময় লাগবেনা যখন হালকা উপসর্গ দেখেই বলে দেয়া যাবে এটা অমিক্রন। আর ডেল্টা বা অমিক্রনের জন্য আলাদা কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। একই ধরণের চিকিৎসা, তবে এখন পর্যন্ত ডেল্টার মতো অমিক্রনের কারণে ফুসফুসে সংক্রমণটা এত দ্রুত হয়না, ফলে অমিক্রনের রোগীরা অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগছেন না।

কাজেই এখন দেশে যত সংক্রমণ হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা বোঝা যাবে না, কারণ চাপ বাড়ছে না হাসপাতালগুলোতে। কিন্তু ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে যেকোন সময়। তাতে আগের মতোই সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবেন বয়স্ক এবং কো-মরবিডিটি যাদের আছে তারা। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবেই ভিড় বাড়বে, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হবেন। ফলে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার পরিস্থিতির সেই চিত্র আবারো পুনরাবৃত্তি হবে। দেশের শিক্ষাখাতের পুরো বারোটাই বেজে যাবে। আর্থসামাজিক যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে ওঠার মতো অবস্থা থাকবে না।

অমিক্রন দ্রুত ছড়ায় বলেই নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরির দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। তার প্রমাণও আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি, সম্প্রতি সাইপ্রাসে ডেল্টাক্রন নামের নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। হয়তো সেটা ডেল্টা বা অমিক্রন থেকেও ভয়াবহ হতে পারে, তখন কোনো ভ্যাকসিন কাজ নাও করতে পারে। তাই অমিক্রনের সংক্রমণ প্রতিহত করা জরুরি।

 

এখন সরকারিভাবে জনসমাগম বন্ধের নানা নিয়মকানুন চালু হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে বিক্ষিপ্তভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কি হচ্ছে আর না হচ্ছে সেই পুরনো কাসুন্দিতে না যাই। সবাই কমবেশি আমরা সব জানছি, দেখছি, কিন্তু মোটাদাগে জনসাধারণের জন্য বেশ কয়েকটি ম্যাসেজ আছে, যা খুব সরল ভাষায় আমরা বোঝার চেষ্টা করে দেখতে পারি। যেমন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অমিক্রন যে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কম ক্ষতিকর, সেটি বলার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। আর কোন টিকা অমিক্রন, আর কোনটা ডেল্টার জন্য কাজ করছে, সেটা বলার মতো সময় এখনো আসেনি। তবে টিকা নেওয়া থাকলে অন্তত এখন পর্যন্ত যাদের ৬ মাস পার হয়ে যায়নি, তাদের জন্য একটা রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারবে টিকাটি। অন্তত কিছুটা হলেও টিকার কারণে শরীরে তৈরী হওয়া অ্যান্টিবডি আপনাকে বড়সড় শারীরিক সমস্যা তৈরী হওয়া থেকে রক্ষা করবে। সুতরাং  আপনি যদি টিকা নিয়ে থাকেন, তাহলেই আপনি নিরাপদ।

তাই অমিক্রন বা ডেল্টাক্রন যাই আসুক না কেন, জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা দিতে পথেঘাটে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরতে হবে, হাত পরিষ্কার আর দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ, করোনার নানা ধরনের কবলে আমরা পড়ছি এবং প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ধরন আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। আমরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। হয় তো আমরা সেটা জানিও না। নিজের অজান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছি সংক্রমণ। তাই সতর্ক ও সাবধান থাকা খুব জরুরি।

 

লেখক: সাংবাদিক