মার্কিন নির্বাচন ও প্রবাসীদের ভাবনা

তাপস সি. আচার্য প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৪, ১১:৫৭ এএম

বর্তমান সময়ের সারা বিশ্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে আলোচিত নির্বাচন হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। যা মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শুরু হবে ভোটগ্রহণ। একদিকে রিপাবলিক প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। এবারের হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনে প্রাধান্য পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি, কর, গর্ভপাত, অভিবাসন, পররাষ্ট্রনীতি, বাণিজ্য, জলবায়ুসহ নানাবিধ ইস্যু। বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, কঠিন একটা লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে কিছু বিশ্লেষক কয়েকটি কারণে ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখছেন। 

নির্বাচনে সাতটা রাজ্যকে ‘ফলাফল নির্ধারণী রাজ্য’ হিসেবে দেখা যাচ্ছে; রাজ্যগুলো হচ্ছে নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাডা, উইসকনসিন, পেনসেলভেনিয়া এবং মিশিগান। যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এই রাজ্যগুলো থেকে বেশি ইলেকটোরাল ভোটে জিতবেন। যিনি ন্যুনতম ২৭০টা ভোট ইলেকটোরাল ভোট পাবে অন্যরাজগুলোসহ, তিনিই হোয়াইট হাউজে পরবর্তী চার বছর অবস্থান করার টিকেট পেয়ে যাবেন। 

ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ, ল্যাটিনো (স্প্যানিশ ভাষাভাষী) লোকজন এবং মুসলিম ভোটাররা ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিলেও এবার দেখা যাচ্ছে এই ভোটারদের একটা বড় অংশ রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে ভোট দেবে। ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির প্রচারণার ফলে অনেক নিম্নআয়ের কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিনো ভোটাররা বিশ্বাস করা শুরু করেছে অবৈধ অভিবাসীদের কারণে তারা কর্ম হারাচ্ছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছে গত চার বছরের ডেমোক্র্যাট শাসনামলের উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ কষ্টকর অর্থনীতি। তদুপরি ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধে ৪০ হাজারের বেশি মুসলিম মারা যাওয়ায় অনেক মুসলিম রিপাবলিক প্রার্থী ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। এই কারণে মুসলিম অধ্যুষিত মিশিগানে এবং ল্যাটিনো অধ্যুষিত পেনসেলভেনিয়া এবং অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা বেশি। তবে কমলা হ্যারিসের ভোটের একটা বড় অংশ হচ্ছে তরুণী। গর্ভপাত ইস্যুতে কমলাকে তারা ভোট দেবেন, অন্যদিকে হাই স্কুল ডিগ্রিধারী বয়স্ক সাদা আমেরিকানদের বেশির ভাগ ভোট পাবেন ট্রাম্প। 

যদিও মোটা দাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পররাষ্ট্রনীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন আনে না। তবে এবারের নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, তার ওপর নির্ভর করছে দেশটির ইউক্রেন নীতি, মধ্যপ্রাচ্য (ইসরায়েল, সৌদি এবং ইরান)  নীতির ওপর। চীনের ক্ষেত্রে যদিও নীতির পরিবর্তন হবে না। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে নীতি প্রয়োগ করা হবে, সেটার একটা পার্থক্য থাকবে। কমলা জিতলে বাইডেন প্রণীত নীতিরই সম্প্রসারণ হবে, অন্যদিকে ট্রাম্প জিতলে এই নীতিগুলোর পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। এ কারণে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমেরিকার নির্বাচন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে এবং চীনকেন্দ্রিক ভূ-রাজনীতির কারণে ডেমোক্র্যাট সরকার যেভাবে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করছে, ট্রাম্প জিতলে ইউনূস সরকার সেভাবে সহযোগিতা নাও পেতে পারে। এর কারণ ট্রাম্পের চীননীতিতে ভারতের ভূমিকা অনেকাংশে বাইডেননীতির চেয়ে আলাদা হবে। এর ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে এবং পরবর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার অনেকটা নির্ভর করবে আমেরিকার কোন দল জয়ী হয়। এবং তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তিতে। ফলশ্রুতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মতো ১০ হাজার মাইল দূরের ছোট্ট বাংলাদেশের জনগণের তীক্ষ্ন দৃষ্টি রয়েছে এই নির্বাচনের ওপর। হয়তো বা বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপ্রকৃতিও নির্ভর করতে পারে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। একমাত্র ভবিতব্যই পারে এর উত্তর দিতে।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বহুজাতিক কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্র