ভাড়া বাড়লেও বাড়েনি পরিবহন শ্রমিকদের বেতন

একে সালমান প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২১, ০২:০৯ পিএম

জ্বালানি তেল বাড়ানোর পর পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের মুখে দেশজুড়ে বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। তবে বাস ভাড়া বাড়ানো হলেও বেতন বাড়ানো হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাস টার্মিনালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্ধিত ভাড়া নিয়েই যাত্রী বহন করছে গণপরিবহনগুলো। সরকার তেলে চালিত বাসের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও  সিএনজিচালিত বাসের ভাড়াও বাড়িয়ে নিচ্ছেন চালকরা। এতে যাত্রীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তবে যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরাও। তাদের দাবি, বাস ও পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হলেও এর প্রভাব তাদের বেতনে পড়েনি। এখনও তারা আগেই বেতনেই কাজ করছেন এবং মালিকপক্ষ এই বিষয়ে কোনো আশ্বাসও দেননি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বলাকা পরিবহনের এক কর্মী বলেন, "পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে যাত্রীরাও ক্ষিপ্ত। যাত্রীদের গালাগালির আমাদের শুনতে হচ্ছে। ভাড়া বাড়ানো হয়েছে এতে আমাদের তো কোনো লাভ নাই। যা লাভ হলো সব পরিবহন মালিকদের। উল্টা বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। এখন বাজারে গেলে সব কিছু বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। আমাদের বেতন তো বাড়ানো হয়নি।" 

মিডলাইন বাসের হেলপার আশিক বলেন, "প্রতিটি চেকে ৫টাকা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। পরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের তো বেতন বাড়ানো হয়নি। তাহলে আমাদের লাভ কি? বাজারে গেলে সব কিছু বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সব কিছুর দাম বাড়ায় আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে।"

"আমাদের লাভ কোথায়? সব লাভ তো মালিকরাই ভোগ করছে। আমরা চাই, ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের বেতনও যেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়" বলেন বাসের হেলপার আশিক।

রজনীগন্ধা বাসের শ্রমিক এনায়েত বলেন, "জ্বালানি তেল বৃদ্ধির কারনে মালিকদের ডাকে আমরা ধর্মঘটে গেছে। এই কয়েক দিনে আমাদেরও চরম ক্ষতি হইছে। ভাড়া তো বাড়ছে কিন্তু আমাদের লাভ কী? আমাদের কোনো লাভ নাই। আমাদের কোনো বেতন বাড়ায় নাই মালিকরা। আমরা আগের মতোই দুর্ভোগে আছি।"

আলিফ পরিবহনের শ্রমিক রায়হান বলেন, " ভাড়া বাড়লে মালিকদের নির্দেশে আমরা আদায় করি। আমরা প্রতিনিয়ত যাত্রীদের বকা হজম করি। অন্যদিকে আমাদের বেতন তো বাড়ে নাই। সব কিছুই বাড়ে কিন্তু আমাদের বেতন বাড়ে না। তাহলে অযথা মানুষের বকা শুনে লাভ কী? আমরা চাই আমাদের বেতন বাড়ানো হোক। এই নিয়ে আমরা কাউন্টারে কথা বললেও মালিকপক্ষ আমাদের কোনো কথাই শুনে না।"

এর আগে রোববার (৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে বিআরটিএ ভবনে বৈঠক শেষে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, "দূরপাল্লার বাসভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৪৫ পয়সা। মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।"

জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে তিনদিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট হয়।

ধর্মঘট তুলে নিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে বাস মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হলে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।