মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একটি স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিকে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। র্যাব জানায়, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আব্দুল আহাদ নাইছের ছেলে রাসেল মিয়া (৩২) ও বাবর মিয়া (২৮), একই এলাকার কুটি মিয়ার ছেলে মাসুদ মিয়া (৪২) এবং মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে মো. মরছিদ মিয়া (৬৮)।
প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত নাজমুল হাসান (৩৬) কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব জানায়, গত ৩১ অক্টোবর দুপুর দেড়টার দিকে চৈত্রঘাট বাজারের সমিতির অফিস থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় নাজমুলকে প্রকাশ্যে দিবালোকে রামদা, চাইনিজ কুড়াল ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই শামসুল হক ১৪ জনের নামে এবং পাঁচ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা দেশজুড়ে ব্যপক সমালোচিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
খন্দকার আল মঈন আরো জানান, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিহত নাজমুল হাসানের সঙ্গে একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আহাদ নাইছের ছেলেদের দীর্ঘ দিন দ্বন্দ্ব চলছিল। এর ফলে নাজমুলের দলের হামলায় পা ভেঙে যায় নাইছের ছেলে জুয়েলের। গ্রেপ্তারকৃত বাবর ও রাসেল এবং মামলার পলাতক আসামি তোফায়েল ও জুয়েল পরস্পর সম্পর্কে ভাই হয়। এছাড়া মামলার ১নং আসামি তোফাজ্জলের শ্বশুরের সঙ্গেও নাজমুলের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেও অতীতে উভয় পক্ষের মারামারি হয়।
র্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ভাইয়ের ওপর হামলার প্রতিশোধ নিতে নাজমুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এতে সহযোগিতা করে নিহত নাজমুলের অন্য প্রতিপক্ষরা। এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন তোফায়েল। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটনের জন্য আসামিরা ভাড়াকৃত মাইক্রোবাস ব্যবহার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।