গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) অংশ নিতে রোববার (৩১ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ১৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরকালে ফ্রান্সেও যাবেন তিনি।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
আগামীকাল রোববার সকাল ৯টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে এবার কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজের (কপ) ২৬তম আয়োজন শুরু হচ্ছে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে। আগামী ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সম্মেলন শেষে লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পরে ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বঙ্গবন্ধুর নামে ইউনিসেফ প্রবর্তিত পুরস্কার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অ্যাওয়ার্ড ইন ক্রিয়েটিভ ইকোনমিক্স’ প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স অব পার্টিজের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশন হচ্ছে।
এতে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদল রোববার গ্লাসগোর উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। আগামী ১ ও ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন। ১ নভেম্বর কপ-২৬ এর শীর্ষ বৈঠকে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। একই দিন সিভিএফ কমনওয়েলথের একটি যৌথ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন তিনি।
জলবায়ু সম্মেলনের (১ নভেম্বর) বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কোন কোন বিষয় গুরুত্ব দেবেন? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আগামী ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কপ-২৬ শীর্ষক বৈঠকে ভাষণ দেবেন। সেখানে পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য কথা বলবেন তিনি। পৃথিবীকে রক্ষা করতে কী কী প্রয়োজন, সে বিষয়ে কথা বলবেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী যে মুজিব প্রসপারিটি প্ল্যান নিয়েছেন, আমরা চাই, অন্যান্য দেশও এর অনুকরণে প্ল্যান তৈরি করবে, যাতে পৃথিবী বাঁচানো যায়।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে প্রতি বছর বহু লোক নদীভাঙনের কারণে বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে। আমরা চাই, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে। আমাদের এ ধরনের অনেক কর্মসূচি আছে। এগুলো বাস্তবায়নে অর্থের প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন ফোরামে এসব খাতে অর্থায়নের জন্য তাগাদা দিচ্ছি৷ এজন্য আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলার দিতে বলেছি। এটা অর্জনের পথে আছি আমরা।”
মন্ত্রী আরো বলেন, “১ নভেম্বর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ‘অ্যাকশন অ্যান্ড সলিডারিটি: দ্য ক্রিটিকাল ডিকেইড’ শীর্ষক একটি সভায় অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। ২ নভেম্বর ‘ওইমেন অ্যান্ড ক্লাইমেট’ শীর্ষক সভায় তিনি অংশ নেবেন।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিভিএফ সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সিভিএফ-কপ-২৬ লিডার্স ডায়ালগ হবে।
এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, জলবায়ু অভিযোজন ও অর্থায়নের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা-গ্লাসগো ডিক্লারেশন গৃহীত হবে বলে আমরা আশা করছি।’
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে ‘এ কল ফর ক্লাইমেট প্রসপারিটি’ শীর্ষক বক্তব্য দেবেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, প্রিন্স অব ওয়েলস ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টসহ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানান মোমেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ৩ থেকে ৮ নভেম্বর লন্ডনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি শহরের ওয়েস্ট মিনিস্টার প্যালেসে দেশটির সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে আগামী ৯ থেকে ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্স সফর করবেন। সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বেশকিছু ফরাসি প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ এমইডিএইএফএর প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সময় বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও লেটার অব ইনটেন্ট সই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ১২ নভেম্বর ইউনেসকোর ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এতে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বজনীন আদর্শ তুলে ধরার পাশাপাশি জাতিসংঘের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে সফর শেষে আগামী ১৪ নভেম্বর দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।