পুলিশ সেজে ডাকাতি করত চক্রটি

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২১, ০২:৫৪ পিএম

রাজশাহীর স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মো. শামীম রেজা (৩০) ঢাকায় আসেন ২০০৫ সালে। পরে চাকরি শুরু করেন সাভারের একটি গার্মেন্টসে।

এদিকে হঠাৎ মাদক গ্রহণ শুরু করেন শামীম। এরপর ধীরে ধীরে নিজেই নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন মাদকের হাব ও ব্যবসা। একপর্যায়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব ডাকাত চক্র। 

পুলিশ সেজে অভিনব পন্থায় চক্রটি একের পর এক ডাকাতি শুরু করে। পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে চক্রটি গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় অন্তত ৮টি ডাকাতি করেছে।

এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পরিচয় দিতেন মাদকাসক্ত ডাকাত শামীম। 

পরে পুলিশ সেজে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ঢাকার সাভার থানার রাজাশন থেকে ভুয়া এসআই আমিনুল ওরফে শামীমসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। 

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন হেলাল উদ্দিন (৩৫), মো. পারভেজ (২৫), ওয়াসিম ইসলাম (২৫), নাইম খান (২৭), ফেরদৌস আহমেদ রাজু (২৯)।

গত ২৪ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সাভার মডেল থানার পশ্চিম রাজাশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, গুলি, একটি নকল পিস্তল, পিস্তল টাইপ লাইটার, কভারসহ হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি, ২ সেট পুলিশ ইউনিফর্ম, পুলিশ জ্যাকেট, পুলিশ বেল্ট, ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, দুটি রামদা, একটি ডেগার, একটি চাপাতি, দুটি ছুড়ি, দুটি টর্চলাইট, দুটি রশি, ৪৬৭ পিস ইয়াবা, ৩০ বোতল ফেনসিডিল, দেড় কেজি গাঁজা, ৭ গ্রাম হেরোইন, ৫ লিটার চোলাই মদ, ১৯টি মোবাইল এবং নগদ ৪৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। 

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, “গ্রেপ্তার শামীম রেজা কিশোর বয়স থেকেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। সে গ্রামের একটি স্থানীয় স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে কর্মের জন্য ২০০৫ সালে ঢাকায় আসে। পরে সে গার্মেন্টসে চাকরি করে। মাদকাসক্ত হওয়ায় মাদক কারবারিদের সঙ্গে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে সে তার নেতৃত্বে একটি ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলে।”

সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি রাতের আঁধারে পুলিশের ভুয়া ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় টর্চলাইট দিয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল এবং দামি জিনিসপত্র লুট করত বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শামীম ২৫-৩০টি অটোরিকশা ও সিএনজির মালিক। তার নামে অস্ত্র, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে নিজেকে আমিনুল হক নামে পুলিশের এসআই (উপপরিদর্শক) পরিচয় দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশিয় অস্ত্র, নকল আগ্নেয়াস্ত্র, নকল আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করতেন। সাভার এলাকায় সক্রিয় ডাকাত চক্রের পাশাপাশি ও মাদকের হাবও নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

আরও জানা যায়, শামীম বিভিন্ন সময়ে ভুয়া পুলিশ অফিসার সেজে চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা ও বানোয়াটভাবে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করতেন। 

এছাড়া শামীমসহ গ্রেপ্তার সবার বিরুদ্ধে সাভারসহ বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। 

শামীম পুলিশ পরিচয়ে কত দিন ডাকাতি করছিল জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, “তিন থেকে চার বছর ধরে ডাকাতদল পরিচালনা করছে। সে নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করছে দুই বছর। এর মধ্যে সে ৮-৯টি ডাকাতি করেছে মর্মে তথ্য মিলেছে। নিজের এলাকা রাজশাহীতে সে জমিজমা করেছে। সাভারে গ্যারেজ আছে। সেখানে ৩০টি সিএনজি আছে। এর আগে শামীম রেজা প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৪ সিও বলেন, “সুনির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া পুলিশের পোশাক বিক্রির সুযোগ নেই। এরপরও কোনো ফাঁকে পুলিশের পোশাক সংগ্রহ করেছে। এসআই পরিচয়ে পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”

পুলিশের পোশাক সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী বা অন্য কারো যোগসাজশ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।