বেপরোয়া মসলা, ধরাছোঁয়ার বাইরে এলাচ

মো. মির হোসেন সরকার প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৪, ০২:৩২ পিএম

ভারতের বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ গেল মাসে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২শ’ রুপিতে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১ হাজার ৬৮০ টাকা (প্রতি রুপি ১.৪০ টাকা)। তথ্যটি ভারতের মসলা বোর্ডের ওয়েবসাইটের। ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা সেই এলাচ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি প্রায় ৪ হাজার টাকা দরে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মসলা আমদানিতে সরকারের নির্ধারিত আয়কর ৫৯ শতাংশ। এতে প্রতি কেজি মসলায় গুণতে হয় ৯৯২ টাকা। ফলে এলাচের দাম পড়ে যায় প্রতি কেজিতে ২ হাজার ৬৭২ টাকা। পরিবহন ব্যয় ও বন্দরের খরচ মিলে মসলার সর্বোচ্চ বাজার মূল্য হতে পারে ২ হাজার ৭৫০ টাকা। তবে কোনো কারণ ছাড়াই প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত এক থেকে দেড় হাজার টাকা ধরে বাজারে এলাচ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার টাকা দরে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গেল এক বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে এলাচের দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ। তাদের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কোরবানির ঈদে এলাচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। সেই দরের সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমানে দাম  বেড়েছে তিনগুণ।

এ তো গেল এলাচের কথা। অন্যান্য মসলার মধ্যে দারুচিনি, জিরা, লবঙ্গ, তেজপাতা, আদা, রসুনসহ শুকনা মরিচ ও হলুদের গুঁড়ার দামও বেড়েছে। এসব পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত থাকলেও দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মসলা কিনতে আসা মমিনুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিটা মসলার দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১৫০ টাকার বেশি। কোরবানির ঈদের আগে মসলার দাম বাড়া নতুন কিছু নয়। তবে গেল ঈদের চেয়ে এবার দুই দুইবার বেড়েছে মসলার দাম। আগে বাড়ল বাজেট ঘোষণার পরদিন। আরেক দফা বেড়েছে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে।”

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কোরবানির ঈদ আসার আগেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন অসাধু মসলা ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। এতে দ্বিগুণ তিনগুণ বেড়ে যায় বেশিরভাগ মসলার দাম। লাগামছাড়া পণ্যের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা কাজে আসে না। বাজারে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণেই সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়।

বেসরকারি একজন চাকরিজীবী আব্দুল মান্নান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রতিবছর ঈদ এলেই গরম হয়ে যায় মসলার বাজার। আমরা না পারি ভালোমতো পণ্য কিনতে, না পারি কিছু করতে। আগে দুশ’ টাকায় যে পরিমাণ মসলা কেনা যেত, এখন ৫শ’ টাকাতেও সেই পরিমাণ মিলছে না।”

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাজারে মসলা কিনতে কিনতে গিয়ে দরদাম আগের চেয়ে বেড়েছে। বিক্রেতারা যে যার মতো মাসলার দাম হাঁকছেন, ক্রেতারাও দরদাম করে নিজের চাহিদার অনেকটা কমই কিনছেন। তবে বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ থাকলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কেনায় দাম বেশি রাখতে হচ্ছে।

এলাচ

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি জিরা ৮০০ টাকা, কালো এলাচ ২ হাজার ৬৫০ টাকা, সাদা এলাচ ৩ হাজার ২৮০ টাকা, দারুচিনি ৪২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৬৮০ টাকা, গোল মরিচ ৮৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও, প্রতি কেজি আদা ২৭০ টাকা, রসুন ২৭০ টাকা, শুকনা মরিচ ৪০০ টাকা এবং গুঁড়া হলুদ ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মসলা বিক্রেতা মো. সবুজ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কোরবানি ঈদের আগে সব ধরনের মসলার চাহিদা বাড়ে। তাই ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, তত দাম বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এবার মসলার বাজার অনেকটা চড়া। ঈদের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আর দাম বাড়তে পারে।”

সব ধরনের মসলা খুচরা ও পাইকারিতে বিক্রি করেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। তিনি বললেন, “ঈদ উপলক্ষে আগেই ব্যবসায়ীরা মসলা কিনে রাখেন। তবে গেলবারের চেয়ে এবার সব মসলার দাম বেড়ে গেছে। ফলে এবারের বাজার আগের চেয়ে চড়া।”