আলিম শেখ। পেশায় চাকরিজীবী। রাজধানীর প্রাইভেট এক কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় নানা ক্ষোভ রয়েছে তার। আগে ১ হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেলে ব্যাগ ভরে বাজার আনা যেত। আর এখন তার আর হয় না। আলিম শেখের মতোই দেশের পেশাজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা আগের মতো আর নেই। এমন পরিস্থিতিতে আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। এ বাজেটে প্রতিদিনের খরচে যেন স্বস্তি আসে এমন প্রত্যাশা পেশাজীবীদের।
আলিম শেখ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মোটামুটি বেতনের চাকরি করে সংসার ভালোভাবে চালাতে পারছি না। পরিবারের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে সব জিনিসের দাম লাগামছাড়া।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে আলিম শেখ আরও বলেন, “বাজেটের অনেক কথা হয়, কিন্তু বাজেট চলে গেলে আর কারও কথা ভাবা হয় না। এসি রুমে বসে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করলে তা ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। আমরা চাই বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেন আসে। সবকিছুর দাম যেন থাকে নাগালের মধ্যে। তাহলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবো।”
আলিম শেখের মতোই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাজারও পেশাজীবী। সিন্ডিকেটের কবলে থাকা বাজার নিয়ন্ত্রণে শতভাগ সফলতা আসছে না। আর সিন্ডিকেটের প্রভাব সরাসরি পড়ছে ভোক্তার ওপর। আসছে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হলেও তার সুফল সাধারণ মানুষ কতটুকু পাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এনামুল হক নামের আরেক চাকরিজীবী বলেন, “প্রতিবছরই বলা হয় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। অনেক অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারক মহলের লোকজন বড় বড় সভার আয়োজন করে দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে নানা পদক্ষেপের কথা জানান। তবে সেসব পদক্ষেপ ঘোষণাতেই সীমাবন্ধ থাকে। আসছে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। এপ্রিলে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ ও শহরে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে এমনটাই মনে করছেন পেশাজীবীরা। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করা রবিন ইসলাম বলেন, “গত বছর বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল। তবে অর্থবছরের শেষ দিকে এসে সেটি এখনও সাড়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছি। আসছে বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।”
বাজেটের বড় আকারকে দেশীয় অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় বাস্তবসম্মত বলা হলেও সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কোনো স্বস্তি মিলছে না। তথ্য বলছে, আসছে বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতবছরের চেয়ে বাড়ানো হতে পারে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা। চলতি বাজেটে এ হার ছিল ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির বর্তমান হার যেখানে ৯.৭৪ শতাংশ, সেখানে এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ করা হলে তা উচ্চাভিলাষী হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।