খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, অর্থপাচারের মতো ঘটনায় আর্থিক খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা হারাতে বসেছে সাধারণ মানুষের। এছাড়া অনেক ব্যাংক একীভূত হওয়ার কারণে সঞ্চয় হারানোর শঙ্কা বাড়ছে। ফলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখছেন গ্রাহকরা। এসব কারণে ব্যাংক খাতের সুরক্ষা ও সুফল নিশ্চিত করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ চান সাধারণ গ্রাহকরা।
তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে তারল্য সংকটে অনেকটাই মৃতপ্রায় কয়েকটি ব্যাংক। যে কারণে ব্যাংক খাত সংস্করণে বাজেটে নির্দেশনা জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না করলে অর্থনীতির অন্যতম এই খাতের ব্যবস্থাপনা মুখ থুবড়ে পড়বে।
ব্যাংক এশিয়া পিএলসি’র একজন গ্রাহক নাজমুল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গ্রাহক হিসেবে ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা বাড়াতে সরকারের বিশেষ সহায়তা চাই আমরা। এ খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক রাকিব সরকার বলেন, “নিজের কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকা ব্যাংকে রেখে প্রতিনিয়ত শঙ্কায় থাকতে হয়। ব্যাংকে না রেখে ঘরে টাকা রাখাই বর্তমান নিরাপদ মনে হয়। কিন্তু আমরা চাই টাকা ব্যাংকে রাখতে। তাই ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতসহ বাজেটে নিদের্শনা ও গ্রাহকসেবার মান বাড়ানোর পদক্ষেপের দাবি জানাই।”
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি’র গ্রাহক শাহীন বলেন, “আমরা কোনো ভয় ছাড়া আবারও ব্যাংকে টাকা রাখতে চাই। আশা করছি, বাজেটে এবার ব্যাংক খাতের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। তা না হলে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষ যে আস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে, আর ফিরবে না।”
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, “আমাদের অর্থনীতি কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দরকার রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে ভারসাম্যমূলক বাজেট।”
এদিকে, বাজেটে আর্থিক খাতের বড় ধরনের সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভঙ্গুর দশা সারাতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ আর সুশাসন দরকার।
অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ায় বঞ্চিত হয় বেসরকারি খাত। মন্দ ও খেলাপি ঋণ, অর্থপাচার, অনিয়ম, দুর্নীতির লাগাম টানা ও সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে আরও ভয়াবহ সংকটে পড়বে অর্থনীতি। তাই মন্দ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে ব্যাংকিং খাতে তারল্য বাড়াতে হবে। বাজাটে বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে।”