কতটা নিরাপদ ফুটপাতের শরবত-আখের রস?

বিজন কুমার প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১০:০০ এএম

তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসী। কাঠফাটা রোদে তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই তাই ছুটছেন ফুটপাতে বিক্রি হওয়া লেবু ও অন্যান্য শরবতসহ আখের রস বিক্রি হওয়া দোকানগুলোতে।  যদিও অনেকেই জানেন না, শরবতে ব্যবহৃত পানি কিংবা আখের রস কতটা নিরাপদ? তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পানীয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হলেও পান করার আগে লক্ষ্য রাখা জরুরি ব্যবহৃত পানি বিশুদ্ধ কি না।

সরেজমিনে রাজধানীর ফার্মগেট, পান্থপথ, কারওয়ান বাজার এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতেই বিক্রি হচ্ছে এসব পানীয়। দোকানগুলোতে ক্রেদের উপচেপড়া ভিড়।

বিক্রেতাদের দাবি, শরবত ও রসে ব্যবহার করা বরফের টুকরো এবং তাদের পরিবেশন পদ্ধতি সবকিছুই নিরাপদ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১০০ মিলি আখের রসে ক্যালরি ২৪২, প্রোটিন ০.১৬ গ্রাম, মোট ফ্যাট ০.০৪ গ্রাম, মোট ফাইবার ০.৫৬ গ্রাম, উন্মুক্ত সুগার ১২.৮৫ গ্রাম, পটাশিয়াম ১৫০ মিলি গ্রাম, সোডিয়াম ১.১৬ মিলি গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৩.০৩ মিলি গ্রাম, ফসফরাস ২২.০৮ মিলি গ্রাম, থায়ামিন ০.০৩ মিলি গ্রাম, ও রাইবোফ্লোবিন রয়েছে ০.০৪ মিলি গ্রাম।

আর একটি আদর্শ আকৃতির লেবুতে ক্যালরি ১৭, ফ্যাট ০.২ গ্রাম, সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৫.৪ গ্রাম, ফাইবার ১.৬ গ্রাম, সুগার ১.৫ গ্রাম, প্রোটিন ০.৬ গ্রাম, ভিটামিন ৩০.৭ মিলিগ্রাম ও পটাশিয়াম রয়েছে ৮০ মিলিগ্রাম

হানিফ নামের এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায় কারওয়ান বাজারে। প্রচণ্ড গরমে তিনি এসেছেন আখের রসের দোকানে। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আখের রস খেলে শরীরের ক্লান্তি অনেকটাই দূর হয়। তাছাড়া অনেক গরম পড়ছে। এসব দোকানে বিশ্বাসের ওপরে খেতে হচ্ছে। এখন তারা যদি খারাপ খাওয়ায় তাহলে তাই খেতে হবে। তবে অনেক দিন ধরে তো খাই, আল্লাহর রহমতে কিছু হয়নি। তবে ওসব চিন্তা করে খাই না।”

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আব্দুল রাজ্জাককে পাওয়া যায় পান্থপথ এলাকার ফুটপাতের একটি ফলের শরবতের দোকানে। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “ভালোমন্দ চিন্তা করবো কোন সময়। যে গরম পড়ছে, ঠান্ডা হবো সে জন্যই দ্রুত খেয়ে ফেলছি। ভালো না, খারাপ ওসব আল্লাহই জানে।”

রাসেল নামের এক লেবুর শরবতের ক্রেতা বলেন, “প্রচণ্ড গরম, তারা কোথায় থেকে বরফ আর এই পানি এনেছে এটা দেখা দরকার। গরমে তবুও খেলাম, যদিও ক্ষতি হলে শুধু আমার হবে না, যারা খাচ্ছে সবার হবে।”

বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা বড়ুয়া শুচি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গরমের কারণে অনেকেই দেখা মাত্রই রাস্তায় বিক্রি করা আখের রস ও লেবুর শরবত খেয়ে বসেন। কিন্তু এটা অনেকেরই অজানা যে সেটা প্রস্তুত হয়ে যখন একজন ভোক্তার কাছে আসে, সেটা কতটুকু নিরাপদ। আমরা বরাবরই সকলে রাস্তার খাবার খেতে নিরুৎসাহিত করি। তাই আমি মনে করি রাস্তায় বিক্রি হওয়া শুধু সরবতই নয়, কোনো প্রকার খোলা খাবার খাওয়াই ঠিক নয়।”

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মারুফ আহম্মেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গরমের এই সময়টাতে দেশের সর্বত্রই আখের রস, লেবুর শরবতের চাহিদা বাড়ে।  এসব পান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে এসব শরবতে কোন ধরনের পানি ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া এখানে বরফ ব্যবহার করে বিক্রেতারা। সেই বরফ কোন পানি দিয়ে তৈরি। পানিটি বিশুদ্ধ কি না এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এগুলো আসলে একজন ভোক্তাকে দেখে বুঝতে হবে। তা না হলে ডায়রিয়া, আমাশয়ের মতো রোগ হবে।”