মণ্ডপে কোরআন রাখা কে এই ইকবাল?

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২১, ০৯:২৮ পিএম

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখেছিলেন যে ব্যক্তি তাকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। তিনি কুমিল্লা নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর নুর আহম্মদ আলমের ছেলে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ।

ইকবালের মা বলেন, “ইকবাল বিবাহিত। তার একটি মেয়ে আছে। কুমিল্লার মিয়ার বাজার এলাকায় বিয়ে করেছে সে। তার বয়স ৩০ বছর। সে রংমিস্ত্রির কাজ করতো।”

তার মায়ের দাবি যে, হের (ইকবাল) মাথানষ্ট। মাথা খারাপের ফলে প্রচুর মাইর খাইছে মানুষের। সে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে ইয়াবা সেবন করতো। আর নেশার টাকার জন্য সে যেকোনো কাজও করতে রাজি।

ইকবালের মা আরো বলেন, “ইকবাল ভাত খাইতে বসলে প্লেটে পানি ঢেলে দিতো। বাইরের ডাস্টবিন থেকে ময়লা ঘরে নিয়ে আসতো। সে নেশা করে ১২-১৩ বছর বয়স থেকে। আর মদিনা নামের একটি বাসে কন্টাক্টারি করতো। আমার বাকি দুই ছেলেকে কষ্টে দেখে আমি মা হিসেবে থাকতে পারছি না। কারণ হে (ইকবাল) তো একদিন মইরাই যাইবো (মারা যাবে)। তাই আমি দোআ করি আল্লাহ যেন এমন সন্তান আর কোনো মাকে না দেন।”

তার ভাই ছোট ভাই রায়হান বলেন, কেউ যদি বলে যে তোকে (ইকবাল) নাস্তা খাওয়ামু (খাওয়াবো) আয় সঙ্গে বা কোনো মাজারে ঘুরতে নিয়ে যামু তাইলে সে যেকোনো কাজ করতো। আসলে তাকে টাকা বা মাজারের লোভ দেখালেই সে যে কোনো কাজ করে দিতো। 

বুধবার (২০ অক্টোবর) কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইকবালকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, “পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে এই অগ্রগতি হয়েছে। ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

কুমিল্লা পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৩ অক্টোবরের ঘটনার পর গত এক সপ্তাহে ঢাকা ও কুমিল্লা পুলিশের কয়েকটি দল তদন্ত শুরু করে। এ সময় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ইকবাল হোসেনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, ইকবাল হোসেন ভবঘুরে। তার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলেও জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

এদিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, “ভিডিওটি আমি দেখেছি। এতে দেখা যাচ্ছে এক যুবক মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে রাস্তার দিকে আসে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম তার হাতে কোরআন শরিফ নেই। হনুমান ঠাকুরের গদা হাতে নিয়ে তিনি ঘোরাঘুরি করছেন।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “আমি গতকালও (মঙ্গলবার) বলেছি তাকে (অভিযুক্ত) গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই যুবক মোবাইল ব্যবহার না করার কারণে তাকে ট্র্যাক করা যাচ্ছিল না। এখন পর্যন্ত সে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছে। আমরা তাকে নজরদারিতে রেখেছি। যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।”

দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কথিত ‘কোরআন অবমাননার’ অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন থানায় আট মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালী মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি ও দাউদকান্দি থানায় একটি মামলা হয়েছে। ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কুমিল্লার ঘটনার পর গত কয়েক দিনে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।