গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যা, আটক স্বামী

একে সালমান প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২১, ০৯:২৯ পিএম

গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যা করার পর পাষণ্ড স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বুধবার (১৩ অক্টোবর) সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, “গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্ত্রী স্বর্ণা বেগমের (৩৫) গায়ে গরম তেল ঢেলে দেন স্বামী মজনু। এর ১২ দিন পর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্বর্ণা।

“এ ঘটনায় স্বর্ণার মা শিরিনা বেগম ১ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর আমরা হত্যা মামলার আসামি মজনুকে খুঁজে বের করতে অভিযানে শুরু করি। পরে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রাতে কেরাণীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করি আমরা।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৭ সালে পারিবারিকভাবে মজনুর সঙ্গে বিয়ে হয় স্বর্ণার। তাদের সংসারে ১১ বছর বয়সী একটি ছেলে এবং দুই বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর তারা জামালপুরে মজনুর গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। স্থানীয় বাজারে গার্মেন্টস থেকে পাইকারিভাবে পোশাক কিনে দোকান বিক্রি করতো মজনু। 

কিন্তু কিছুদিন পরই যৌতুকের জন্য স্বর্ণার উপর তার স্বামী নির্যাতন করে। যৌতুকের জন্য মারধর করে গুরুতর জখম করায় স্বর্ণার দুলাভাই মো. ময়নুল ইসলাম বাদী হয়ে মজনুর বিরুদ্ধে সরিষাবাড়ি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলায় মজনু গ্রেপ্তার হয়ে ২ মাস ১৯ দিন জেলও খাটেন। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় মজনু ও তার পরিবারের সদস্যদের আশ্বাসের ভিত্তিতে ময়নুল ইসলাম মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।

এদিকে নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় ছয় মাস আগে সন্তানদের নিয়ে স্বর্ণা বেগম তার বাবা-মায়ের কাছে সিরাজগঞ্জে চলে যান। পরে ফিরে এসে, আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে স্বর্ণা তার সন্তানদের মায়ের কাছে রেখে আশুলিয়ার জিরানীতে ডরিন গার্মেন্টসে সহকারী হিসেবে প্রায় তিন মাস কাজ করেন।

এরপর মজনু মিয়া কৌশলে তার স্ত্রীর ঠিকানা সংগ্রহ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সেখানে গিয়ে আবারও যৌতুকের টাকার জন্য ঝগড়া-বিবাদ শুরু করেন। এ সময় যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীর শরীরে গরম তেল ঢেলে দিলে শরীরের অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়। তখন স্বামী মজনু তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে স্বর্ণার পরিবার তাকে চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে নিয়ে যান। স্বর্ণার শরীরের প্রায় ৫২ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৬ অক্টোবর ভোরে স্বর্ণা মারা যান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মজনু মিয়া তার স্ত্রীর শরীরে গরম তেল ঢেলে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।