পুরান ঢাকায় শুরু হয়েছে পৌষ মেলা

সোহানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪, ০১:২০ পিএম
পৌষ মেলার উদ্বোধন করেন সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

ইট-পাথরের এই শহুরে জীবনে শীতের পরশে রং লাগাতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী পৌষ মেলা। পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরে ওয়াইজঘাটের বুলবুল ললিতকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলার আয়োজন করা হয়। 

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে এ মেলা। এদিন সকাল ৯টায় পৌষ মেলার উদ্বোধন করেন সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর।

তরুণ প্রজন্মের কাছে বাঙালি জাতিসত্তাকে উপস্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত এ মেলায় দর্শনার্থীদের রয়েছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।

শীতের রকমারি পিঠার স্বাদ উপভোগের সুযোগের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিনই মঞ্চে থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। লোকায়ত জীবননির্ভর সংযাত্রা, যাত্রাপালা, নৃত্য-গীত ও কবিতার পসরায় সাজানো হয়েছে এ আয়োজন। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আমাদের বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটেছে। ৭৫-এ ইতিহাস বিকৃতির নতুন ধারা হয়েছিল। সেটির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। সেটা অব্যাহত আছে। এখন ক্রমাগত বড় হচ্ছে সেটা হলো ইতিহাসের বিস্তৃতি। আমরা সচেতন থাকি না। আমাদের সন্তানদের এগুলো জানাই না। পৌষ মেলাসহ যেসব উৎসব যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ছিল সেগুলো আমরা ভুলতে বসেছি। সেগুলো বিলীন হয় যাচ্ছে। সেগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের সকলের কর্তব্য একদিকে ইতিহাস বিকৃতিকে রোধ করা, অন্যদিকে ইতিহাসের বিকৃতিকে প্রতিরোধ করা।”

তিনি আরও বলেন, “পৌষমেলা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একটি বড় পদক্ষেপ। এভাবেই আমরা আমাদের ঐক্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের বাঙালি জাতীয়বাদের প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারব।”

বুলবুল ললিত একাডেমির সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, “পৌষ মেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। এটি আদিকাল থেকেই আমাদের প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে। বাঙালি সংস্কৃতি সেই আদিকাল থেকেই ধারা অব্যাহত রেখেছে। জাতপাত ধর্মের বিরুদ্ধে মানুষই প্রধান।”

গোলাম কুদ্দুস আর বলেন, “বারো মাসে তেরো পার্বনের দেশ। এটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্র। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ। একে কেন্দ্র করেই হাজার বছর ধরে বেঁচে আছি। এটাকে কেন্দ্র করেই নানা ধরনের আচার চালু হয়েছে। এই মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে একখণ্ড বাংলাদেশকে আমরা একত্রিত করার চেষ্টা করেছি। বাঙালি সংস্কৃতি আয়োজনের মধ্যে আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে দেখাতে চাই। সংস্কৃতি আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে। সেটাই আমরা তুলে ধরতে চাই।”

আদি ঢাকার সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ও পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী বলেন, বারো মাসে তেরো পার্বণের যে চিরায়ত কথা। তা যেন আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের আদি সংস্কৃতিকে তুলে ধরা। তাদের সামনে আমাদের পিঠাপুলিকে তুলে ধরা। যাতে তারা সেই সংস্কৃতিকে ধারণ করতে পারে।