দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠন করার পর এবার সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের নির্বাচিত করতে যাচ্ছে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। ফেব্রুয়ারি মাসেই এই কাজ শেষ করে উপজেলা নির্বাচনে হাত দিতে চায় দলটি। তবে সবকিছুতেই থাকবে চমক। মূল্যায়ন করা হবে দলের ক্লিন ইমেজসম্পন্ন ও পরীক্ষিত কর্মীদের। তবে এবার কী চমক আসছে সংরক্ষিত এমপি নির্বাচনে। এটি পরিষ্কার হতে হলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে উপজেলার তফসিল দিতে পারে নির্বাচন কমিশন। সেই তথ্য অনুযায়ী বর্তমান সরকারের প্রথম অধিবেশনের পর সংরক্ষিত আসনের এমপি নির্বাচিত হবে। তাই প্রথম অধিবেশনে সংরক্ষিত আসনের এমপিদের নিয়ে আলোচনা হতে পারে নিজেদের (আওয়ামী লীগ) মধ্যে। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের সরকারি গেজেট প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেটাকে মাথায় রেখেই কাজ শুরু করেছে দলটি। এরই মধ্যে দলীয় প্রার্থীর একটি তালিকা তৈরি করেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রায় ৩৬ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলীয় ও স্বতন্ত্র নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সংসদের নারী এমপিদের অনেককে বাদ দিয়ে আনা হতে পারে নতুন মুখ। এসব নতুন মুখ বিগত দিনে দলের প্রতিটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন এবং বিএনপি-জামায়াতসহ দেশি-বিদেশিদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজপথে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। একই সঙ্গে তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিত। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই কপাল পুড়তে পারে বর্তমান সংরক্ষিত এমপিদের। ইতিমধ্যে তাদের সবার বিগত দিনের আমলনামা (কর্মকাণ্ড) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে রয়েছে এবং পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭১ জন এমপিকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে যে সংস্কার শুরু করেছেন শেখ হাসিনা, সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদবিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, আইনজীবী, উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, অভিনেত্রীরা। সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। সেই সূত্রে জাপা দুটি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে। এই দুটি আসনে আলোচনায় দলটির কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের ও সালমা ইসলাম। এর বাইরে ৪৮ জনের মধ্যে ১০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত করতে পারেন। তবে সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নির্বাচিত হবেন জাতীয় সংসদের নির্বাচিত ৩০০ আসনের এমপিদের ভোটের মাধ্যমে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম সর্বোচ্চসংখ্যক ১০ জন সংরক্ষিত নারী এমপি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবে। এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে প্রায় ৪-৬ জন সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে পারেন।
সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়নে আলোচনায় যারা
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের বোন। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. রোকেয়া সুলতানা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, মারুফা আক্তার পপি, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা। আরও আলোচনায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অভিনেত্রী তারানা হালিমও।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাবিনা আক্তার তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমা আক্তার লাবণ্য, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রোকেয়া সুলতানা সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে চান। শরীয়তপুর সংরক্ষিত আসনে আলোচনায় অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার ও বর্তমান সংরক্ষিত আসনের এমপি পারভীন শিকদার, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আফরুজা বারী, ফরিদপুরে মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদিকা মাহমুদা বেগম আলোচনায় আছেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নাটোর-৪ আসনের প্রয়াত এমপি আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপিকা অপু উকিল, যুব মহিলা লীগ সভাপতি ডেইজি সারোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আক্তারও সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে চান। এছাড়া নাট্য তারকাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন তারিন জাহান, রোকেয়া প্রাচী। সিনে তারকাদের মধ্যে মাহিয়া মাহি, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার। অনেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেত্রীরাও সংরক্ষিত ৫০ আসনে নৌকার মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপির সঙ্গে। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি দায়িত্ব দেন তাহলে জনগণের সেবা করব।”
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমা আক্তার লাবণ্য বলেন, “আমি সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। ছাত্রলীগ থেকে এখন আমি উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষিত আসনে মূল্যায়ন করবেন বলে আশাবাদী।”
যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আক্তার বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। এবার সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে দায়িত্ব দেন, জনগণের সেবা করতে চাই।”
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনী তফসিল আগামী সপ্তাহে হতে পারে। এই রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী দলগুলো কোটায় আসন বরাদ্দ পাবে। পরিস্থিতি বুঝে স্বতন্ত্রদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।