আগুন লাগার খবর পেয়েই তড়িঘড়ি করে মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে ছুটে আসেন প্রসাধনী ব্যবসায়ী মো. সাজেদ হোসেন। এসে দেখেন মার্কেটে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আগুনের এ ভয়াবহতা আর নিজের পরিবারের ভবিষ্যতের চিন্তায় এখনো কাঁদছেন সাজেদ হোসেন। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়েছি ফেলেছি। আগুন আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। জানি না, এখন কীভাবে জীবন চলবে। আমরা চাই দ্রুত সময়ে মার্কেট মেরামত করে আমাদের বুঝিয়ে দেবে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সাজেদ হোসেনের মতো সকল ব্যবসায়ীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্য মার্কেটটি মেরামত করে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হোক।”
অগ্নিকাণ্ডের ষষ্ঠ দিন পর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটির সংস্কারের জন্য ভিতর থেকে আগুনে পোড়া মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের সহযোগিতা করছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আগুনে পুড়ে যায় মার্কেটটি। এ ঘটনায় বৈধ ও অবৈধ মিলে প্রায় চার শতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওইদিন ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের ঘড়ি ও চশমার ব্যবসায়ী আহাদ ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এই মার্কেটে তার একটি দোকান ছিল। কয়েকদিন আগে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে দোকানে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মাল তুলেছেন। মালগুলো ভালো লাভে বিক্রি করতে পারতেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমার সব স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। কয়েক লাখ টাকার ঋণের বোঝা মাথার ওপরে এখন পড়েছে।”
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক দোকানি ইউনুস সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার দোকানে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। আগুন লাগার আগের রাতে দোকান গুছিয়ে বাসায় যাই। হঠাৎ করে রাত ৩টার দিকে দেখি মানুষের চেঁচামেচি। মার্কেটের পাশে বাসা হওয়ায় দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে মার্কেটে আসি। এসে আমিও তিন কোনায় তিনটি পৃথক দোকানে আগুন দেখতে পাই। আমার দোকান ভিতরে হওয়ায় কিছু বের করতে পারিনি।”
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলের পাশে ফুটপাতে কথা হয় নিউ ফ্যাশন নামে একটি দোকানের কর্মচারী জামিল হাসানের সঙ্গে। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটটিতে ১ হাজারের বেশি কর্মচারী রয়েছে। অধিকাংশ দোকানের কর্মচারী গত মাসের বেতনও পায়নি। এর মধ্যে আগুনে সব পুড়ে গেছে। এখন দোকান মালিক কবে বেতন দেবেন সেটাও জানি না। এ ছাড়া দোকান আবার খুলবে কি না সেটাও জানি না। কীভাবে ঘর ভাড়া দেবো, কীভাবে ছেলে-মেয়ে, মা-বাবাকে টাকা পাঠাবো।”
ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট মেরামতের বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এই মার্কেটে ডিএনসিসির বরাদ্দ দেওয়া দোকানের সংখ্যা ৩১৭টি। তবে মার্কেট-সংলগ্ন ফুটপাতে অনেক অবৈধ দোকান ছিল। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমরা তাদের তালিকা করছি। পাশাপাশি মার্কেটটির অবকাঠামো কীভাবে ঠিক করা সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে।”