৩০ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে ক্রোকারিজের দোকান দিয়েছেন জাকির হোসেন। আগুনে পুড়ে তার একমাত্র সম্বল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জীবনের শেষ সঞ্চয় ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন যেন স্বচ্ছলভাবে চলতে পারেন। এখন সহায় সম্বল দুটোই হারিয়েছেন তিনি।
জাকির হোসেনের মতো মাহফুজের চোখের সামনে পুড়তে দেখেছেন নিজের দুইটি দোকান। কিন্তু তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তার। প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ ছিল তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে। রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনিও।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের এমন অনেক ব্যবসায়ী একেবারে পথে বসে গেছেন।
জানা গেছে, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে মার্কেটটিতে পাঁচশর বেশি দোকান আছে। এসব দোকানে কাজ করে ২ হাজারের বেশি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। মার্কেটে সবজি দোকানের পাশাপাশি জুতার দোকান, স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান রয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর পোড়া দোকানের সামনে ফুটপাতে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাপড়ের দোকানের মালিক মামুন মিয়া সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মার্কেটে আমার ৫টি দোকান আছে। এসব দোকানে শাড়ি, লুঙ্গি, শার্ট, প্যান্ট ও গেঞ্জি ছিল। কিছুদিন আগে আত্মীয়-স্বজন ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ১৫ লাখ টাকার মতো মালামাল কিনেছিলাম। এখন আগুন লাগার পর কিছু মাল বের করতে পেরেছি। বাকি মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে। সব হারিয়ে পথে বসা ছাড়া আর উপায় নেই আমার।”
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কসমেটিক ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মার্কেটের ‘খ’ সিরিয়ালের ১২ নম্বর ও ১৪ নম্বরে আমার দুটি দোকান ছিল। দোকানে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুই বের করতে পারিনি। নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল।”
মার্কেটের কালাম ক্লথ স্টোরের মালিক আবুল কালাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এই মার্কেটে ২৫ বছরের ব্যবসা আমার। তিলে তিলে করা এই ব্যবসা ছেলেকে বুঝিয়ে দিয়েছি এক মাস হলো। আগুনে আমার কয়েক লাখ টাকার মালামাল পুড়েছে। দোকানে মালের হিসাবের খাতাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সম্পদ বলতে এখন আর কিছুই নেই।”
নিঃস্ব হয়ে দোকানের সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছেন কাপড়ের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আমরা লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাঁটিয়ে ব্যবসা করি। আর মার্কেটের কিছু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে আমাদের দোকানের সামনের ফুটপাত ও রাস্তায় দোকান বসায়। আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারি না। কিছু বললে আর ব্যবসা করতে পারব না। এসব দোকানের কারণে স্বাভাবিক সময়েও চলাচল করা যায় না। আগুন লাগার পরে অনেক ব্যবসায়ী দোকান থেকে মালামাল বের করতে পারেননি। রাস্তাটা ক্লিয়ার থাকলে আরও বেশি মালামাল রক্ষা করা যেত।”
এর আগে বুধবার রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে আগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, মার্কেটে ৩৬৫টি বৈধ দোকান ছিল। তবে ফায়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বারবার নোটিশ দেওয়ার পরেও আমলে নেয়নি মার্কেটের দোকান মালিক সমিতি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।