রাজধানীর বৃহত্তর কাপড়ের পাইকারি মার্কেট পুরান ঢাকার সদর ঘাটের ইসলামপুর। একসময় দিন-রাত সরগরম থাকতো এই মার্কেট। দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারাই এখানে ভিড় জমাতেন পাইকারি মূল্যে কাপড় কিনতে। চলতো ধুম বেচা-কেনা। অথচ এই মার্কেট এখন অনেকটা ক্রেতা শূন্য।
এই মার্কেটে শার্টের কাপড়, প্যান্টের কাপড়, সালোয়ার কামিজ, থ্রি পিসসহ নানা ডিজাইনের কাপড় পাওয়া যায়। রয়েছে দেশি-বিদেশি খ্যাত-অখ্যাত ব্র্যান্ডের কাপড়ও।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- এখানে মূল ক্রেতা ছিল বরিশাল অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশালের ক্রেতারা এই মার্কেটে আসছে না। পাশাপাশি গত কয়েকমাসে দ্রব্য মূল্যর ঊর্ধ্বগতি আর ডলার সংকটে দেশি-বিদেশি সব কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আরও কমেছে বিক্রি।
সরজমিনে সদরঘাটের এই মার্কেটে দেখা যায়, পায়ের মোজা থেকে মাথার টুপি অর্থাৎ কাপড় বলতে যা বোঝায় সবই পাওয়া যায় এখানে। ইসলামপুরের এই মার্কেট থেকেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকমের কাপড় সারাদেশে সরবরাহ হয়। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত দেশি কাপড় বিপণনের জন্য নিয়ে আসা হয় এই ইসলামপুরেই। জাপান , চীন, ভারতসহ অনেক দেশ থেকে আমদানি করা কাপড়ও এখান থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বেচা-কেনা না থাকায় দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
এখানকার পাইকারি কাপড়ের দোকানেগুলোতে প্যান্টের পিস মানভেদে ৩০০ থেকে শুরু করে ২,০০০ টাকায়ও বিক্রি হয়। শার্টের পিস ও পাঞ্জাবির কাপড়ও মানভেদে ২০০ থেকে শুরু করে ১২০০ টাকায় পাওয়া যায়।
রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলোতে মান ও কাজভেদে ৬৫০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকায় মিলছে দেশি থ্রি পিস। সেলাই ছাড়া থ্রি পিস মিলছে ৬০০ থেকে ১,৮০০ টাকায়। নানা কারুকাজ ও বাহারি রঙের পাঞ্জাবি নেওয়া হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪,৫০০ টাকা পর্যন্ত।
যা বলছেন ব্যবসায়ীরাঃ
দেশি বিদেশি প্যান্টের কাপড়ের পাইকারি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন। কাপড়ের বাজারদর নিয়ে সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “এবার দেশি-বিদেশি উভয় কাপড়ের বাজার দর গত বছরের তুলনায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি খুলতে না পারার কারণেই কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বিক্রিও কমেছে।
ইসলামপুরের আহসান সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলার প্রীতি টেক্সটাইলের মালিক মো. উজ্জল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “করোনার কারণে দীর্ঘদিন খুব খারাপ সময় পার করেছি আমরা। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এখন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী নতুন করে পুঁজি খাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। যদিও এখন আবার দ্রব্যমূল্যের কারণে পণ্যের ব্যয় বেড়ে গেছে। বিক্রিতে কিছুটা হলেও ধাক্কা লাগছে। ফলে আবারও নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “সাধারণত আগের বছরগুলোতে ঈদকে সামনে রেখে কয়েক মাস আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা কাপড় কেনা শুরু করতেন। এসব পাইকাররা এখান থেকে নিয়ে তা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। আগে এই সময়টাতে ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম থাকত ইসলামপুর মার্কেট। কিন্তু সে তুলনায় এ বছর ক্রেতা নেই বললেই চলে।”
টেক্সটাইল ওয়্যান্স উইমেন্সের ম্যানেজার আব্দুল মান্নান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এ বছর ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ভারত ও চীনের কাপড়ের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ, কাপড়ের রঙের দাম বাড়ার কারণে দেশি কাপড়ের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তাছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চ দিয়ে বরিশাল অঞ্চলের যাতায়াত কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে।”
ইসলামপুর মার্কেটের পাইকারি বস্ত্র বিতানের মালিক ও সাবেক ব্যবসায়ী নেতা মাসুদুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গত বছর থেকে বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। দিনের লেনদেন প্রায় অর্ধেক নেমে এসেছে। এক সময় এখানে দিনে লেনদেন ছিল সোয়াশ থেকে দেড়শ কোটি টাকা পর্যন্ত। ঈদের কয়েক মাস আগে থেকেই এর পরিমাণ বাড়ত অন্তত পাঁচগুণ।”
তিনি আরও বলেন, “অসহনীয় যানজটও ইসলামপুরে ব্যবসার অন্যতম বড় সমস্যা। যানজটের তিক্ত অভিজ্ঞতায় অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী অন্য জায়গা থেকে মাল কিনছেন। আবার অনেকে ইসলামপুরের বিকল্প হিসেবে নরসিংদীর বাবুরহাটেও যাচ্ছে।”