ক্রেতা স্বল্পতায় মহাখালীর কাঁচাবাজার

খাদিজা নিপা প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৩, ০৬:৪৯ পিএম
একসময়ের জমজমাট মহাখালী কাঁচাবাজার ক্রেতাস্বল্পতায় এখন সুনশান নিরবতায়। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

১৯৯২ সাল থেকে রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজির ব্যবসা করেন মো. হানিফ মিয়া। ৩১ বছরের ব্যবসা তার। তবে দীর্ঘ ব্যবসায়ীক জীবনে তিনি সবচেয়ে মন্দ সময় কাটাচ্ছেন এখন। করোনাকালীন সময়ের পর থেকেই মন্দার শুরু। করোনার আগে তার দুই ছেলে পড়াশোনা করতো রাজধানী সিভিল এভিয়েশন উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখন খরচ চালাতে না পেরে দুই ছেলেকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন মাদ্রাসায়।   

মো.হানিফ মিয়া সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করতেছি। করোনার পর থেকে ব্যবসা খারাপ। ছুটির দিনেই কিছু ক্রেতার দেখা পাওয়া যায়, অন্য দিনগুলোতে খুব একটা ভাল বিক্রি হয় না। আগে বিক্রি ভাল হতো, লাভও ভাল হতো কিন্তু এখন বিক্রিও কম লাভও কম । যখন লাভ বেশি হতো তখন আমাদের খরচও কম ছিল, কিন্তু এখন হচ্ছে তার উল্টোটা। যেভাবে চলতেছে কোনো রকমে চলতেছি।”

এদিকে, অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে মাছ, মাংস ও ডিম ব্যবসায়ীদের। কেউ অন্যের সাথে গল্প করছে, আবার কেউ মোবাইলে ব্যস্ত। এরমধ্যে ক্রেতা দেখলেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাদের। সর্বচ্চোটা দিয়ে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন তারা। 

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানী মহাখালীর কাঁচাবাজারে গিয়ে ক্রেতা স্বল্পতার এই চিত্র দেখা যায়। সিটি কর্পোরেশনের আয়ত্তে থাকা একটা বাজারও ভাল চলে না দাবি করে এক মাংস বিক্রেতা রহিম (ছদ্মনাম) বলেন, “এই বাজারে আগের তুলনায় কোনো ক্রেতা আসে না এখন। চারপাশের খোলা বাজারেই এখন সবাই ছুটে। আগে যেমন দূর থেকেও এখানে বাজার করতে আসতো এখন সেরকম দেখা যায় না, কারণ মানুষ তার হাতের কাছেই ভ্যানে সব পেয়ে যায়, তাই আর এখানে আসে না’। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি এবাজারে কাজ করেন।”  

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। এর মধ্যে ঢেড়স ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি, কাকরল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, বেগুন ৭০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা কেজি, পটল ও পেঁপে ৪০ টাকা দরে কেজি, ঝিঙা ৭০ টাকা কেজি, উস্তে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি ও কচুর ছড়া ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। 

সবেচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইন্ডিয়ান টমেটো ২৪০ টাকা কেজি, আর চায়না গাজর ১৪০ ও দেশি গাজর ৮০ টাকা কেজি। শাক প্রকারভেদে আটি প্রতি ১৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে। 

অন্যদিকে, সব বাজারেই কিছুটা কমেছে মাছের দাম। হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া দেশি ছোট চিংড়ি এই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া গলদা চিংড়ি আকারভেদে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, বাগদা আকারভেদে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, বড় কাতাল মাছ ৪২০ টাকা কেজি, টেংরা ৬৫০ টাকা, পাবদা ৪৬০, রুই মাছ আকারভেদে ২৫০ থেকে ৪০০, ব্রিগেড ২৬০ টাকা কেজি, পাঙ্গাস ২০০ টাকা কেজি ও চাষকৃত মাছ শিং ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার পর বাজারে আসতে শুরু করেছে ইলিশ। বর্তমানে এই বাজারে আকারভেদে ইলিশের দাম ১০০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি। 

যদিও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে, কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন যেহেতু এখন ক্রেতা কম তাই কম দামেই বিক্রি করছেন। বর্তমানে এই বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।