রিকশাচালকদের প্রিয় মনির ভাতের দোকান

খাদিজা নিপা প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৩, ০৫:৩৫ পিএম
রাজধানীর গুলিস্তানে নগরভবনের সামনের ফুটপাতে মনির খাবারের হোটেল

গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকায় রিকশা চালান বাদশা মিয়া। এ জন্য সারা দিনই রাস্তায় থাকতে হয় তাকে। কঠিন পরিশ্রমের খাটুনি শেষে পেট ভরে খেতে হয়। হোটেলের খাবার খেতে ভালো লাগে না বাদশা মিয়ার। তাই রিকশা নিয়ে যেখানেই যাক না কেন, চেষ্টা করেন দুপুরের খাবারটা গুলিস্তানের মনির দোকানে খেতে।

বুধবার (১৯ জুলাই) তিনি খাবেন মাছ-ভাত। খাবার এগিয়ে দিলেন মনি। মনির দোকান, ঠিক দোকান বা রেস্তোরাঁ না। খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে প্লেট, রান্না করা খাবার নিয়ে বসেন। মনি এসব খাবার বাসা থেকেই রান্না করে আনেন। 

ভাতের সঙ্গে ডিমভুনা খেলে ৫০ টাকা, আর যদি ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস বা মাছ খান, তাহলে গুনতে হবে ৬০ টাকা। সঙ্গে থাকবে যেকোনো শাক।

রাজধানীর গুলিস্তানের নগর ভবনের সামনের ফুটপাতে ১০-১২ বছর ধরে এভাবেই খাবার বিক্রি করছেন মনি। ধীরে ধীরে গ্রাহক বাড়তে থাকে তার। তবে বেশির ভাগ তার হোটেলে খেতে আসা লোকজন রিকশাচালক। কম দামে ঘরে তৈরি খাবার পান বলে তার খাবার খেতে আসেন লোকজন, এ রকমটাই তিনি মনে করেন মনি। 

প্রতিদিন তিনি চার কেজি চালের ভাত, মুরগির মাংস, মাছ আর হাতের কাছে পাওয়া যেকোনো একটা শাক নিয়ে আসেন। এই খাবার বিক্রি করে যে টাকা আয় করেন, সেটা দিয়েই তার একার সংসার চলে। 

একার সংসার কেন, জানতে চাইলে মনি বলেন, ৪৫ বছর আগে ৯ মাসের একটা বাচ্চা রেখে স্বামী মারা গেছেন। তারপর থেকে মানুষের বাসায় থেকে কাজ করি। এখন আর সেভাবে বাসায় কাজ করতে পারি না। ছেলে বড় হইছে, বিয়ে করাইছি। এখন আমার নাতি-নাতনি হইছে তাদের পড়ালেখার খরচ আছে। এখন জোয়ান বয়সেও ঘরে বইয়া থাকলে কি ছেলে, ছেলের বউ জিগাইবো? টাকা না থাকলে কেউই দেখব না, তাই আমার কাম আমি করে খাই। ছেলে আলাদা বউ-বাচ্চা নিয়া থাকে।” 

এই আয় দিয়ে কেমন চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলে না, চালাইতে হয়। জিনিসপত্রের তো দাম বেশি, কষ্ট করেই চলতে হয়। 

পুঁইশাক দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন রফিকুল আলম। পুঁইশাক শেষ হলেই মুরগির মাংস দেওয়া হবে তাকে। তবে সব সময় মুরগির মাংস দিয়ে খান না। বেশির ভাগ সময় ডিম-ভাত খান তিনি। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যেই এখানে এসে খাই। রান্না ভালো, দামও কম। কিন্তু মাঝেমধ্যে তাকে এখানে বসতে না দিলে তো পাওয়াই যায় না। 

এখানে বসতে তার কোনো টাকা দেওয়া লাগে না, তবে নিয়মিত বসতে পারেন না তিনি। নগর ভবন থেকে লোকজন এসে তাকে উঠিয়ে দেয়। সেদিনই তার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। মনি প্রতিদিন যে খাবার নিয়ে আসে, সেগুলোর বিক্রি শেষ করতে বিকেল পর্যন্ত এখানে বসে থাকতে হয়। তার আগে উঠিয়ে দিলে অবিক্রীত খাবার নিয়েই তাকে বাসায় ফিরতে হয়।

রফিকুল নামে এক ক্রেতা জানায়, মাঝেমধ্যেই এখানে এসে খাই। রান্না ভালো, আবার দামও কম। কিন্তু মাঝেমধ্যে তাকে বসতে না দিলে তো পাওয়াই যায় না। এরই মধ্যে ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা এক মহিলা জেগে উঠে মনির কাছে ভাত চাইলেন।