রাসিক নির্বাচনে একক মেয়র প্রার্থী লিটন

এম এম মামুন, রাজশাহী প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম

আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। ইতোমধ্যে বর্তমান মেয়র এ এইচ খায়রুজ্জামান লিটনকেই পুনরায় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর নতুন গতিতে ভোটের মাঠে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন বর্তমান লিটন।

গতবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন পাঁচজন। প্রার্থীদের যথাক্রমে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও বাম জোট মনোনয়ন ও সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু এবারের এখন পর্যন্ত নগরীতে মেয়র পদে লিটন ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর নাম শুনা যায়নি। এমনকি বিএনপির কাউকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু বলেন, “নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। সুতরাং আসন্ন রাসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্নই আসে না।”

এদিকে গত ২৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদপন্থি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শাহাবুদ্দিন বাচ্চু নিজেকে দলের রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন। এরপর তিনি আমেরিকায় চলে যান। তারও নির্বাচনী মাঠে দেখা নেই। তার সঙ্গে কথা বলাও সম্ভব হয়নি।

রাজশাহীতে শাহাবুদ্দিন বাচ্চুর ঘনিষ্ঠ নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পুনরায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় তিনি (শাহাবুদ্দিন বাচ্চু) আর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না।

তবে, গত ১৫ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর পূর্ণপ্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতের পরই সংবাদ সম্মেলন ডেকে বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ঘোষণা করেন ফাঁকা মাঠে নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তিনি আবারও মেয়র পদে জিততে চান।

সংবাদ সম্মেলনে লিটন জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য বিএনপিকে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে যেভাবে রাজশাহীর উন্নয়ন করেছি, মানুষের সেবা করেছি, তাতে নগরবাসী আমাকে আবারও নির্বাচিত করবেন।” আবার নির্বাচিত হলে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ঘোষণাও দেন তিনি।

এরই মধ্যে নগরী জুড়ে মেয়র লিটনের উন্নয়নের বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও ঈদের শুভেচ্ছা শোভা পাচ্ছে।

গত ৩ এপ্রিল দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা অনুযায়ী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৯ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরপর ১৫ এপ্রিল দলীয় প্রার্থীও ঘোষণা করে দলটি।

এদিকে রাসিক নির্বাচন নিয়ে নিজের ও দলের ভাবনা কী জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা কোনো ভোটে অংশ নেবেন না। তিনি বলেন, “বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের কেউই প্রার্থী হবেন না। কেউ প্রার্থী হলে দল থেকে তিনি বহিষ্কার হবেন।”

তবে নগরীতে চায়ের আড্ডাসহ নানা মহলে গুঞ্জন চলছে, শেষ পর্যন্ত মেয়র লিটন হয়তো একেবারে ফাঁকা মাঠ নাও পেতে পারেন। জনপ্রিয় কোনো ব্যক্তি মেয়র প্রার্থী হলে তার প্রতি সমর্থন জানাতেও পারেন বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দলের নেতারা।

এদিকে রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর শুরু হয়েছে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। দলের হাইকমান্ড এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকেই নৌকার প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই কাউন্সিলর প্রার্থীরা মেয়রের কাছে ভিড় করতে শুরু করেন। অনেকেই ফুল হাতে ছুটে যাচ্ছেন মেয়র লিটনকে শুভেচ্ছা জানাতে। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়েও মেয়র লিটনের সমর্থন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলীয় ব্যানারে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ না থাকলেও আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনি মাঠে সুবিধা নিতে ৩০টি ওয়ার্ডের অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন অবশ্য বলেন, “কাউন্সিলর প্রার্থীরা আসছেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে নির্বাচন করবেন। এখানে দলীয় সিদ্ধান্তের কোনো বিষয় নেই। দল থেকে কাউকে সমর্থন দেওয়া হবে না।”