বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
পাশাপাশি দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি কমলে কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তবে একই সঙ্গে দেশের অনেক এলাকায় বাড়ছে ভাঙ্গন।
এ জন্য সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী এ বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির পুরো তথ্য পেতে সময় লাগবে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
চলমান বন্যায় কয়েক লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে অনেক বসতভিটা। ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শরীয়তপুরে ভাঙনের তীব্রতায় জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাজিরা, পালেরচর, কুন্ডেরচর, পূর্ব নাওডোবা, বড়কান্দি ইউনিয়নে ১৯২টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে।
পানি কমার সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলমান বন্যায় কুড়িগ্রামে ১০০ পরিবার, বগুড়ায় ১৬ হাজার ৮০০, জামালপুরে ২২ হাজার ৯৩৪ ও টাঙ্গাইলে ২১২ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জামালপুরে ৭৪১০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে, প্রায় ১৮ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান জানান, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমা আগামী ৪৮ ঘন্টা অব্যাহত থাকবে।
নদ-নদীর ১০৯টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ৭৬টি পয়েন্টে পানি কমেছে। তবে ১৬টি পয়েন্টে এখনও পানি বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে।
আগামী ১০ দিনের পূর্বাভাসের বিষয়ে কেন্দ্রের এ নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি কমতে থাকায় জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মায়ও পানি কমতে থাকায় রাজবাড়ি, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৭ দিনে উন্নতি হবে।
চলতি মৌসুমে আগস্টের শেষ দিকে উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টির হয়।
চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে ১৫টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বিস্তার ঘটে। গত শনিবার থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
সুস্পষ্ট লঘুচাপ, ৩ নম্বর সতর্কতা
অন্যদিকে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘‘ওড়িশা উপকূলের অদূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।’’
আগামী তিনদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ।
এর আগে মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ২৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে শ্রীমঙ্গলে।
তবে এ সময়ে ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে, ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে আবহাওয়ার সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ সময়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়।