মানবপাচার ও বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, চক্রের মূলহোতা মাহবুব উল হাসান (৫০) ও তার সহযোগী মাহমুদ করিম (৩৬)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য ভুয়া কোর্সের ৬৫টি সনদ, ৩০০টি ভুয়া মেডিকেল সনদ, ২২৫টি ভুয়া কোভিড টিকা সনদ জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া সৌদি, ইরাক, কুয়েত, দুবাই, রোমানিয়া, কানাডা ও কম্বোডিয়ায় চাকরির ভুয়া চুক্তিপত্র, টাকা নেওয়ার রেজিস্টার, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ, রোমানিয়ার জাল ভিসা, জাল কাগজপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটার, স্ক্যানার ও প্রিন্টার জব্দ করা হয়।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক লোকজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতেন। এভাবে তারা গত দুই বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা এবং ইউরোপে যেতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে ৬-৭ লাখ টাকা করে জমা নেন চক্রের সদস্যরা।”
র্যাব-৩ এর সিও বলেন, “গ্রেপ্তার মাহবুব ২০০০ সাল থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে কিছু লোক পাঠান। তাদের দেখে প্রলোভনে পড়ে ভুক্তভোগী ও অভিভাবকেরা রাজি হলে প্রথমে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ এক-দুই লাখ টাকা আদায় করেন। পরে দালালের মাধ্যমে কল দিয়ে ভুক্তভোগীদের আশ্বস্ত করতেন। বিদেশ থেকে কল পেয়ে ভুক্তভোগীরা আরও আগ্রহী হন। এই সুযোগে চক্রটি তাদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে।”
র্যাব জানায়, চক্রটি ফ্লাইটের আগে ভুক্তভোগীদের পাসপোর্ট, ভিসা বা টিকিট হস্তান্তর করত না। কখনো কখনো ভুক্তভোগীদের কাজের বদলে ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে পাঠাতেন। বিদেশে পৌঁছার পর সেখানকার এজেন্টের মাধ্যমে আবারো প্রতারিত হতেন ভুক্তভোগীরা। তাদের কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হতো। এরপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
গ্রেপ্তার মাহবুব ও তার সহযোগীর ট্রাভেল এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার কোনো লাইসেন্স নেই। স্বল্প সময়ে, বিনাশ্রমে অধিক লাভ বা অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। ভুক্তভোগীরা বিদেশে গিয়ে কোনো কাজ না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার এবং আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হলেও তাদের কোনো অনুশোচনা নেই।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, “গ্রেপ্তার মাহবুব উল হাসান এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ১৯৯৩ সালে মালয়েশিয়ায় যান। পাঁচ বছর পর দেশে ফিরে কৃষিকাজ শুরু করেন। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় অবৈধভাবে ২০০০ সাল থেকে এক এজেন্সির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানো শুরু করেন।”
তিনি আরও বলেন, “ওই এজেন্সি থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় ২০১৪ সালে আরেকটি এজেন্সির মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। এরপর কোনো ট্রাভেল এজেন্সির সাহায্য ছাড়াই কোটিপতি হওয়ার আশায় নিজেই অবৈধভাবে একটি অফিস খুলে মিথ্যা প্রলোভন ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।”