হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের তথ্য সংগ্রহ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ বা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল করা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। যা দেশের সংবিধান সমর্থিত।”
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, “পুলিশের ঢাকার বিশেষ শাখা (এসবি) সদর দপ্তরের বরাত দিয়ে রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি–ডিএসবি) গত ২৫ সেপ্টেম্বর বেতার বার্তায় জেলার সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের জেলার কমপক্ষে আটজন, প্রতি উপজেলার পাঁচজন এবং রাঙামাটি জেলার সব পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে কমপক্ষে পাঁচ ব্যক্তি, যারা বর্তমান সরকারবিরোধী চলমান গণআন্দোলনে ‘জনবল সংগঠক’ বা অর্থায়ন করে কিংবা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করে; তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রথমে ইমেইলে এবং পরে হার্ডকপি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে যে, ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের সব জেলার পুলিশ সুপার নিজ নিজ এলাকার সব থানার ওসিদের বার্তা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। যা অত্যন্ত ভয়ংকর, অপ্রত্যাশিত, অসাংবিধানিক, এখতিয়ার বহির্ভূত, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আচরণবিধি পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক দল তথা গণমানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও আন্দোলন সমাবেশ করার মৌলিক অধিকার বিরোধী।”
তিনি বলেন, “এটি প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থগুলো বর্তমান সরকারের নির্দেশে চলমান আন্দোলনকে দমন করার জন্য একযোগে কাজ করছে। অথচ বর্তমান গণআন্দোলন চলছে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে এবং এর মধ্যে গত জুলাই থেকে আমাদের দলের পাঁচজন নেতা নিহত হয়েছেন; ভোলায় দুজন, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও খুলনায় একজন করে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দিনে দিনে আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
পুলিশের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “পুলিশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের যে তথ্য সংগ্রহ করছে তা আমাদের সংবিধান কিংবা দেশের অন্য কোনো প্রচলিত আইন বা বিধি-বিধানের আওতায় তারা করতে পারে না। পুলিশ সুপার তার আওতাধীন ওসিদের কাছে তথ্য চেয়েছে তা যে কোনো মানদণ্ডে বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী ও অননুমোদিত পদক্ষেপ।”
তিনি আরও বলেন, “পৃথিবীর সব দেশে দাতা থাকে। আমেরিকায় ফান্ড রেইজিং পার্টি হয়। এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অংশ যে, রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের কর্মী-সমর্থকদের অনুদান নিয়ে চলতে হয়। এটাই স্বাভাবিক প্রচলিত নিয়ম। আর দল করা, সমর্থক করা বা অনুদান দেওয়াও সাংবিধানিক অধিকার। এভাবে নাম সংগ্রহ করা তাদের (পুলিশ) এখতিয়ার বহির্ভূত। এটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ও অসাংবিধানিক।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও বিএনপি আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।