একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. খলিলুর রহমানকে (৬৮) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেপ্তার খলিলুর আল বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে জানিয়ে র্যাব।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টম্বর) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আসামি খলিলুর রহমান ১৯৫৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিল। যুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরে চন্ডিগড় ইউনিয়নের আল বদর বাহিনীতে কমান্ডার হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা থানা এলাকায় অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যায় জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে ২২ জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, একজনকে ধর্ষণের চেষ্টা, অপহৃত চারজনের মধ্যে দুজনকে ক্যাম্পে নির্যাতন, ১৪-১৫টি বাড়িতে লুটপাট ও ৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এর ২০১৭ সালের ৯নং মামলার অভিযোগপত্র তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি মো. খলিলুর রহমানসহ তার ভাই মো. আজিজুর রহমান, একই এলাকার আলমপুর ইউনিয়নের মৃত তরাব আলীর ছেলে আশক আলী, জানিরগাঁও ইউনিয়নের কদর আলীর ছেলে শাহনেওয়াজ এবং একই এলাকার রমজান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংস করা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পাঁচ আসামির মধ্যে মো. খলিলুর রহমান ব্যতীত সবাইকে কারাগারে প্রেরণ করা হয় এবং বিচারকালীন চার আসামি বিভিন্ন সময় মারা যায়। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ৪টিতে মৃত্যুদণ্ড ও ৩১টিতে দশ বছরের সাজা ঘোষণা করা হয়।”
তিনি বলেন, “২০১৫ সাল থেকে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে গৃহীত হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন।”
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, “আত্মগোপনে থাকাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন ও একাকি অবস্থান করতেন। এসময় যোগাযোগের জন্য তিনি কোনো ধরনের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে তার পরিবারের সদস্যরা গোপনে তার সঙ্গে দেখা করতেন। তার ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য নিয়মিত অর্থ প্রদান করতেন। মামলার রায় ঘোষণার পর তিনি গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় তার অবস্থান নিরাপদ নয় ভেবে স্থান পরিবর্তন করে সাভারে আত্মগোপন করেন।”
গ্রেপ্তার খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।