মৃত্যুদণ্ড এড়াতে ছদ্মবেশে ৬ বছর

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ০৩:০৫ পিএম

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. শাহিন আলমকে (৩৮) মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। ২০০৬ সালে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চাঞ্চল্যকর শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী তিনি।

ছয় বছর আত্মগোপনে থাকার পর সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মানিকগঞ্জের ঘিওরে তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে এলে র‍্যাব-৪ এর হাতে ধরা পড়েন তিনি।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেবর) দুপুর ১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “২০০১ সালে শহিদুল ইসলাম ও আসামি মো. শাহিন আলম আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সুবাদে তাদের মাঝে সখ্যতা গড়ে উঠে। শাহিন আলম ভিকটিমকে এনজিও প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দিলে ২০০৪ সালে ঢাকার ধামরাই থানাধীন গোয়াড়ীপাড়ায় ‘বাংলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামক একটি সঞ্চয় ও ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত এনজিও ব্যবসায় লাভের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় শাহিন এনজিওর সকল লভ্যাংশ নিজের করার জন্য ভিকটিমকে কিছু টাকার প্রস্তাব দিয়ে এনজিওটি নিজের করে নিতে চায়। কিন্তু ভিকটিম তাতে রাজি হয়নি। এতে শাহিন ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।”

ঘটনার বিবরণ জানিয়ে মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “ঘটনার ২০-২৫ দিন আগে শাহিন তার মামাতো ভাই টাঙ্গাইলের ‘সন্ত্রাসী’ রাজা মিয়াকে নিয়ে ভিকটিমকে হত্যার পূর্ণ ছক আঁকে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ২০০৬ সালের ২০ মে দুপুরের পর থেকে শাহীন অফিসে বিভিন্ন কাজে ইচ্ছাপূর্বক কালক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে আসামি নিজের জন্য পাত্রী দেখতে যাওয়ার জন্য ভিকটিমকে প্রস্তাব দেয়। জানায় টাঙ্গাইল থেকে তার মামাতো ভাই ও অপর আসামি সাহেদ, কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার এবং ড্রাইভার রহম আলী আসবে। ভিকটিমকে তাদের সঙ্গে পাত্রী দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। রাত হয়ে যাওয়ায় ভিকটিম রাজি না হলে আসামিরা ভিকটিমকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে পাত্রী দেখতে যাবার কথা বলে। তখন ভিকটিম সরল বিশ্বাসে রাজি হয়ে মাইক্রোবাসে উঠলে কিছুদুর যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শহিদুলকে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করেন।”

ডিআইজি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ২৩ মে এনজিওর দুইজন নারী কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানায় ভিকটিম শহিদুলের সঙ্গে আসামি শাহিনের এনজিওটির মালিকানা নিয়ে বিরোধ ছিল। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ শাহীনকে আটক করলে আসামি শাহীন ভিকটিমকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।”

মো. মোজাম্মেল হক জানান, আসামি শাহীন আলম ১০ বছর হাজত খেটে ২০১৬ সালে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং এই মামলায় আর কখনো হাজিরা দেয়নি। মামলাটি তদন্ত করে গ্রেপ্তার দুই আসামি শাহিন আলম ও সাহেদ এবং পলাতক আসামি রাজা মিয়া, আ. কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার, রহম আলী ড্রাইভার ও মাইক্রোবাসের মালিক সেলিমসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর গত বছরের ১ ডিসেম্বর আসামি মো. শাহিন আলমকে মৃত্যুদণ্ড, সাহেদ, রাজা মিয়া, আব্দুল কুদ্দুস এবং বিষ্ণু সুইপারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া দেন আদালত।

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, “মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত শাহিন আলম গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপন চলে যায়। বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে রংপুর, আশুলিয়া, পল্লবী, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পেশা পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থাকে। প্রথমদিকে তিনি ফেরিওয়ালা, গার্মেন্টসের অপারেটর, রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিক, স্যানিটারী মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সর্বশেষ পুলিশের কাছে ধরা পড়লে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে এই ভয়ে পরিবারসহ দেশ ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি সোমবার রাতে মানিকগঞ্জের ঘিওরে তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন।”

মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “র‍্যাব-৪ বেশ কিছুদিন ধরে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলেও অবশেষে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। দীর্ঘ ৬ বছর বিভিন্ন ছদ্মবেশে পলাতক এই আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।”