বগুড়া সদর থানার কৈচড় দক্ষিণ পাড়া গ্রামে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী আলো বেগমকে হত্যা করে পালিয়ে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. উজ্জ্বল প্রামাণিককে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে র্যাব-৩-এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, ২০০৬ সালের জুন মাসে ভিকটিম আলো বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। উজ্জ্বল ও তার পরিবার যৌতুক দাবি করলে বিয়ের দিন ভিকটিম আলো বেগমের বাবা আকবর আলী শেখ আসামি উজ্জ্বল এবং তার পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়। বিয়ের এক মাস পর উজ্জ্বল প্রামাণিক আলো বেগমের বাবার কাছে বিদেশ যাওয়ার জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। আগের ৩০ হাজার টাকা তার মা, ভাই এবং ভগ্নিপতি আত্মসাৎ করেন বলে জানায়।
এ ঘটনার পর বিষয়টি মীমাংসার জন্য উজ্জ্বলের নিজ বাড়িতে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সালিস বসে। সালিসে উজ্জ্বল প্রামাণিকের পরিবার আলো বেগমের বাবাকে যৌতুক বাবদ আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে। আলো বেগমের বাবা উজ্জ্বল প্রামাণিক ও তার পরিবারের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর উজ্জ্বল প্রামাণিক এবং তার পরিবার আলো বেগমকে তালাক দিবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। পারিবারিক সালিসে যৌতুকের বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যাওয়ায় ওই ঘটনার পর থেকে আসামি উজ্জ্বল এবং তার পরিবার আলো বেগমকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঘটনার একপর্যায়ে ২০০৬ সালের ১ আগস্ট গ্রেপ্তার আসামির ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন লাবু আলো বেগমের পরিবারকে মোবাইলে জানান যে আলো বেগম গুরুতর অসুস্থ। এ খবর শোনার পর পরিবারের লোকজন উজ্জ্বলের বাড়িতে গিয়ে ঘরের মেঝেতে আলো বেগমের লাশ দেখতে পায়। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের দুলাভাই মো. জাহাঙ্গীর আলম বুলু বাদী হয়ে আসামি মো. উজ্জ্বল প্রামাণিককে প্রধান আসামি করে, তার মা আলেয়া বেওয়া, ভাই হিরা প্রামাণিক, বোন মোছা. লাভলী বেগম এবং ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন লাবুর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারপিটসহ গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার অভিযোগ তুলে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা করেন।
মামলায় আসামি উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বিজ্ঞ আদালত গত ২৪ জুলাই বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল -১-এর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
এ ছাড়া মামলার অভিযুক্ত অন্য ৪ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
পলাতক জীবন
হত্যাকাণ্ডের পর আসামি উজ্জ্বল প্রামাণিক তার মা আলেয়া বেওয়াকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় এসে পরিচয় গোপন রেখে পলাতক জীবনযাপন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় একটি ফার্নিচারের দোকানে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিতে তিনি কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করেন।
পালিয়ে আসার ছয় মাস পর মোছা. নাছিমা খাতুনকে বিয়ে করে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। এ সময়ের মধ্যে তাদের দুই ছেলেসন্তান হয়। তার স্ত্রী নাছিমা খাতুন একটি গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
গ্রেপ্তার আসামি উজ্জ্বল পালিয়ে আসার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বগুড়ায় নিজ বাড়ি এবং তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে গাজীপুরে আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন আগে তার জনৈক আত্মীয়ের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়েছে। এ খবর পাওয়ার পর থেকে তিনি আশুলিয়ায় সপরিবার একটি ভাড়া বাসায় আত্মগোপন করেন।
গ্রেপ্তার আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক।