লঞ্চে সাবেক স্ত্রীর হাতে খুন হন ‘জিনের বাদশা’

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২২, ০৫:৪২ পিএম

জিনের বাদশা পরিচয়ে প্রতারণাকারী জাকির হোসেন বাচ্চুর বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দীনে। সেখানে তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা থাকতেন। জাকির দুই বছর আগে ফোন দেন আরজু আক্তারকে। জিনের বাদশা পরিচয়ে দেওয়া সেই ফোন থেকেই প্রেম এরপর তাকে বিয়ে করে ঢাকার ভাড়াবাসায় বসবাস করতে থাকেন জাকির।

বিয়ের পর আরজু জানতে পারেন তিনি জাকিরের দ্বিতীয় স্ত্রী। এরপরও জাকিরের একাধিক পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বিবাদের জেরে গত দুই মাস আগে তাদের তালাক হয়ে যায়। তালাক হলেও তারা একজন আরেকজনের বাসায় গিয়ে থাকতেন। তালাক দেওয়া ও একাধিক সম্পর্কের কারণে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন আরজু।

এর মধ্যে আরজু আক্তার জানতে পারেন ২৯ জুলাই জাকির লঞ্চযোগে ভোলা গ্রামের বাড়ি যাবেন। আরজুর বাড়ি জাকিরের বাড়ির পাশের গ্রামে হওয়ায় কেবিন ভাড়া করে তাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেন আরজু। ওইদিন সকালে এমভি গ্রিন লাইন লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া করে দুজন ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। লঞ্চে ওঠার আগে একপাতার ঘুমের ওষুধ ও এক বোতল দুধ কিনে নেন আরজু।

লঞ্চের কেবিনে প্রথমে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। এরপর জাকির পানি আনতে লঞ্চের নিচ তলায় গেলে দুধের বোতলে পাঁচটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রাখে আরজু। কিছুক্ষণ পর জাকির কেবিনে এলে তাকে ওষুধ মেশানো দুধ খেতে বলেন। দুধ খেয়ে জাকির ঘুমিয়ে পড়েন, এরপর তার হাত-পা ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলেন। এরপর আরেকটি ওড়না দিয়ে জাকিরকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

পিবিআই জানায়, গত ২৯ জুলাই সদরঘাট এলাকায় এমভি গ্রিন লাইন-৩ লঞ্চের স্টাফ কেবিন থেকে জাকির হোসেন বাচ্চুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩১ জুলাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত জাকিরের প্রথম স্ত্রী সুরমা আক্তার।

সোমবার (১ আগস্ট) মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ভোরে সাভারের নবীনগর এলাকায় ঢাকাগামী একটি বাস থেকে আরজু আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আদালতে হাজির করলে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আরজু আক্তার।

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।

ঘটনার বিবরণ জানিয়ে মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, “হত্যার পর জাকিরকে কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রুমটি ভালোভাবে গুছিয়ে রাখেন আরজু। এরপর লঞ্চটি ভোলার ইলশা ঘাঁটে পৌঁছালে আরজু নেমে যান। লঞ্চের ক্লিনার ওই কেবিনে এসে রুমটি গুছানো দেখে আর ভেতরে যাননি। দুপুরে লঞ্চটি আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে দুই নারী তিন বাচ্চাকে নিয়ে সেই কেবিনে ওঠেন। এর মধ্যে একটি বাচ্চা খাটের নিচে গেলে এক নারী যাত্রী তাকে আনতে গিয়ে জাকিরের মরদেহ দেখতে পেয়ে লঞ্চের স্টাফদের খবর দেন। পরে স্টাফরা এসে মরদেহ দেখতে পেয়ে ঢাকার নৌ পুলিশকে খবর দেন। লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছালে নৌ পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পিবিআই।”

তিনি বলেন, “মামলা হওয়ার পর পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার নেয়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় আরজু আক্তারকে শনাক্ত করা হয়। আরজু ভোলা নেমে স্পিডবোটযোগে বরিশাল যান। সেখান থেকে বাসযোগে দৌলদিয়া হয়ে ঢাকা ফেরার পথে নবীনগর এলাকায় ঢাকাগামী বাস থেকে আরজু আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

পিবিআইর এ কর্মকর্তা আরও বলেন, “লঞ্চের কেবিনে কোনো যাত্রী উঠলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র রাখার কথা থাকলেও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জাকির ও আরজুর কোনো পরিচয়পত্র রাখেননি। এছাড়া তারা যে কেবিনটি ভাড়া দিয়েছিল সেটি ছিল স্টাফ কেবিন। স্টাফ কেবিন হওয়া সত্ত্বেও তাদের কাছে ভাড়া দেন লঞ্চের স্টাফরা।”