নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার চেয়েছে গণফোরাম। সেই সঙ্গে দলটি বলেছে, “আমরা ইভিএমের পক্ষে নই, তার কারণ ইভিএম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা একেবারেই নগণ্য, যে কয়টি নির্বাচন ইভিএমে হয়েছে, সেগুলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন খুব দ্রুত এ বিষয়ে তাদের অবস্থান প্রতিটি রাজনৈতিক দলসহ জাতির সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরবে।”
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে দলটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি লিখিত প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। দলের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়।
দলটি তার লিখিত বক্তব্যে বলেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচন কমিশন যেভাবেই গঠিত হোক না কেন, কোনো কমিশনই সব রাজনৈতিক দলের এবং গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। অনেক কমিশন চরমভাবে ব্যর্থও হয়েছে। বর্তমান কমিশন এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্বাবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সচেষ্ট হবে এবং সব রাজনৈতিক দল ও গণমানুষের আস্থা অর্জনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দলটি।
দলটির প্রস্তাবনাগুলো হলো
নির্বাচনে নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা; নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনের আগে ও পরে নির্বাচন কমিশনের অধীনে যুক্ত থাকা; নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইসির সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকা; নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইসিকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান; প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও ভোট প্রদানের ব্যবস্থা; নির্বাচনি এলাকার ভিত্তিতে সর্বদলীয় পর্যবেক্ষণ দল গঠন; আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক তালিকা ভোটের একমাস আগে প্রকাশ; স্বচ্ছ ট্রান্সপারেন্ট ভোট বাক্স; ভোটকেন্দ্রে সবার উপস্থিতিতে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা; নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের মামলা দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা।
প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্যদের ব্যয় প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় হিসাবে গণ্য করা; প্রার্থীর নির্বাচনি আয়-ব্যয়ের বিবরণ প্রকাশ করা; কমিশনে আয়-ব্যয় ও সম্পদের মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রার্থীদের শিক্ষাগত, অন্যান্য যোগ্যতা ও কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে কিনা সেই তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্তকরণ ও জনগণকে অবহিত করা; নিজে অথবা পরিবারের কেউ ঋণখেলাপি হলে, কালো টাকার মালিক হলে তার প্রার্থী হতে না পারা; চাকরি বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারা; যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা; দলের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে স্বচ্ছ মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা ও মনোনয়নপ্রাপ্তির জন্য অর্থ দ্বারা প্রভাবিত করার ঘটনা কার্যকরভাবে রোধ করার ব্যবস্থা; নির্বাচনে সব ধরনের বল প্রয়োগ, অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা এবং বল প্রয়োগের ঘটনায় কঠোর শান্তিবিধান করা; নির্দিষ্ট মেয়াদে ফৌজদারি দণ্ডদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারা; কোনো রাজনৈতিক দল কোনো সন্ত্রাসী বা কালো টাকার মালিককে মনোনয়ন প্রদান করতে না পারা; নির্বাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার অপব্যবহার, সাম্প্রদায়িক প্রচার প্রচারণা ও ভোট চাওয়া শান্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা ও সাম্প্রদায়িক প্রচারণা নিষিদ্ধ করা; নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ দান; প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকায় প্রজেকশন সভার ব্যবস্থা করা; তফসিল ঘোষণার পর থেকে সব দলের কেন্দ্রীয় সমাবেশ, মহাসমাবেশ, র্যালি, জনসভার ব্যয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা; রেডিও-টিভির সময় সমভাবে বণ্টন করা এবং তার খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ; প্রিজাইডিং অফিসারসহ ভোট গ্রহণকারী অফিসার তালিকা নির্বাচনের ১৫ দিন আগে প্রার্থীদের সরবরাহ করা; কেন্দ্রের তালিকাও ১৫ দিন আগে প্রকাশ করা।
এছাড়া প্রস্তাব করা হয়, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করা; ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনি আইন অনুযায়ী নির্বাচনকালে সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যান্য আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব ক্ষমতার যে এখতিয়ার ছিল তা পুনর্বহাল করা। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ ও নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে সর্বদলীয় পরামর্শ কমিটি গঠন করা।