ফেসবুক পোস্টে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় সাহাপাড়ায় হামলা হয়। ১৫ জুলাই দিঘলিয়ায় হিন্দু বাড়িঘর ও চারটি মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
রোববার (২৪ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: নাগরিক প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামের সভায় সেই সাম্প্রদায়িক হামলার বর্ণনা দেন দিঘলিয়ার সাহাপাড়ার বাসিন্দা হ্যামলেট সাহা। তার বাবা শিবনাথ সাহা ওই গ্রামের সভাপতি। তাদের বাড়িতে আক্রমণের মধ্য দিয়েই ওই সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হয়।
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হ্যামলেট সাহা বলেন, “ খুব পরিচিত মানুষজন এই হামলা চালিয়েছে। আমার বড় ভাই এই গ্রামের অনেককে চাকরি দিয়েছেন। এই মানুষগুলোই হঠাৎ করে অপরিচিত হয়ে গেল। আমার মনে হচ্ছে, এই গ্রাম আমার না।”
হামলা শুরুর সময়ের বর্ণনা দিয়ে হ্যামলেট জানান, ঘটনার দিন বেলা দুইটার দিকে হঠাৎ স্থানীয় লোকজন লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাজার ঘুরে মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এ সময় ভয়ে সবাই দোকানপাট বন্ধ করে দেন। আতঙ্কে সবাই তাদের বাড়িতে চলে আসেন। তখন তার বাবা সবাইকে শান্ত থাকতে বলেন। এ সময় ২০০ থেকে ৩০০ লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে তার বাবা শিবনাথ সাহাকে বাবাকে খুঁজতে থাকেন।
তখন হ্যামলেট সামনে গিয়ে বলেন, এইটা ফেইক আইডি থেকে করা হয়েছে। কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত না করে কয়েকজন হ্যামলেটকে মারতে উদ্যত হন।
হ্যামলেট বলেন, “আমরা যখন অশোক সাহাকে পুলিশের কাছে দিলাম, তখন আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে ১০-১২ জন করে ঢুকে গেল। যাদের অনেককেই চেনা পরিচিত ছিল। প্রতিটি বাড়ির দরজায় তারা কড়া নেড়ে বলেছে—টাকা দে, না হলে ঘরবাড়ি ভেঙে দেব, পুড়িয়ে ফেলব, তোদের মেরে ফেলব।”
হ্যামলেট সাহা আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতারা যখন গ্রামে প্রবেশ করে তার আগেই হামলা শেষ। ভাঙচুর হয়েছে ৩০ মিনিটের মতো। যখন বাজার লুট হয়, তখন এতজন ছিল যে তখন প্রশাসনের লোক ছিল ১০–১২ জন।
হ্যামলেট সাহা বলেন, “বাবাকে যখন গালি দিচ্ছিল ‘এই মালাউনের বাচ্চা’, তখন এই কষ্ট বাবা নিতে পারেননি। বাবা শুধু কাঁদছিলেন।”