ময়মনসিংহের ত্রিশালে মহাসড়কে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে বাবা, মা ও এক সন্তানের মৃত্যু ও মায়ের পেট ফেটে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনায় ট্রাকচালক রাজু আহমেদ শিপনকে ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার শিপনের ভারী যানবাহন চালনার জন্য কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। আগে তার মধ্যম সারির গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, যা ২০১৬ সালে হারিয়ে যায়। এর পর থেকে তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
র্যাব আরও জানায়, গত ৬-৭ মাস আগে থেকে তিনি ১০ শতাংশ কমিশনে বর্তমান ট্রাকটি চালিয়ে আসছিলেন। গাড়িতে সব সময় কাঁচামাল পরিবহন করা হতো। যার বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। গাড়িটির ধারণক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন ১৩ দশমিক ৫ টন ছিল বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার রাজু ২০০২ সালে যশোরের এক ট্রাক ড্রাইভারের হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এর ফলে তার বাঁ পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার ফলে সে প্রায় ৬ বছর গাড়ি চালায়নি। এখনো তার বাঁ পায়ে সমস্যা আছে। এ নিয়েও গত ১০ বছর ধরে তিনি ট্রাক চালাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “গ্রেপ্তার রাজু ১১ জুলাই থেকে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিলেন। এর মধ্যে তিনি একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মালামাল আনলোড করে পুনরায় রাজশাহী ফিরে আসেন। এরপর ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে গাড়ির মালিকের আম বোঝাই করে এবং পরবর্তী সময়ে রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১২টার সময় রওনা করেন।
পথিমধ্যে তিনি হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন এবং কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি পৌঁছালে রাস্তা পারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আলম (৩৫)। দুর্ঘটনার সময়, অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগমের (২৬) ওপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ায় চাকার চাপে গর্ভে থাকা কন্যাসন্তান অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়।
এ সময় স্থানীয়রা নিহত দম্পতির আহত সন্তান সানজিদা ও সদ্যোজাত কন্যাকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সানজিদারও মৃত্যু হয়। কিন্তু সদ্যোজাত শিশুটির ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে গেলেও সে বেঁচে যায়। ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবীব নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শিশুটি চিকিৎসাধীন।
গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, “নিহত জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন নির্মাণশ্রমিক। দুর্ঘটনায় নিহত কন্যাসন্তান ছাড়াও তাদের পরিবারে ১০ বছর বয়সী ২ ছেলে ও মেয়ে সন্তান আছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ট্রাকচালক রাজু নিহতদের গাড়িচাপা দেওয়ার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। এর আগেও তিনি জেল খেটেছেন।”
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজু আহমেদ ওরফে শিপন র্যাবকে বলেন, “ট্রাকটি একটু উঁচু হওয়ায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারকে তিনি দেখতে পাননি। একটি গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে তিনি বাঁয়ে চেপেছিলেন। যখন চাপতে গিয়েছিলেন তখন ব্রেকটি কাজ করেনি। গাড়িটিতে মালামাল বেশি হওয়ায় ওজনও বেশি ছিল। যখন রাজু বুঝতে পেরেছিলেন তখন তিনি গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি।”
খন্দকার আল মঈন বলেন, “দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে গ্রেপ্তার রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বাস থেকে তিনি ময়মনসিংহ বাইপাসে নামেন এবং সেখান থেকে একটি সিএনজি করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে অপর একটি বাসে করে তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছাযন। সেখান থেকে তিনি তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাকচালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকে। এ ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের পিতা বাদী হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা করেন।”
জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।