২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিবন্ধীদের ভাতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে বয়স্ক, বিধবাসহ অন্যান্য উপকারভোগীর ভাতা না বাড়লেও সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট উপস্থাপনকালে এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ভাতা কর্মসূচির বাইরেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যার উপকারভোগী ছিল ১ লাখ এবং এদের পেছনে বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।”
দেশের অটিজম ও নিউরো–ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় ‘বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বিমা’ চলতি বছরের জাতীয় বিমা দিবসে চালু কথাও জানান অর্থমন্ত্রী।
বর্তমানে জনপ্রতি প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা নির্ধারিত আছে ৭৫০ টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নতুন বাজেটে এটি আরও ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হয়েছে।
এখন সারা দেশে ২০ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী সরকার থেকে নিয়মিত নগদ মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সংখ্যায় নতুন আরও ৩ লাখ ৫৭ হাজার যুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট ২৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রতিবন্ধী সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আসছেন।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ২ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এই বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অভিঘাতের বিষয়টি। বিশেষ করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা— এই বিষয়গুলোকে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।